ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব: অস্ত্র ফেলে গাজা ছাড়লে হামাসের জন্য শান্তির পথ খুলবে?
মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে চাঞ্চল্যকর মোড়—ইসরায়েল এবার স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তবে শর্ত সাপেক্ষে। গাজা উপত্যকায় দেড় বছরের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের সামনে কয়েকটি অপ্রতিরোধ্য দাবি রেখেছেন।
তেলআবিব থেকে প্রকাশিত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যুদ্ধ চিরতরে থামাতে হলে হামাসকে সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে, গাজার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে, ও হামাসের সকল সদস্যকে উপত্যকা ছেড়ে নির্বাসনে যেতে হবে। সেই সঙ্গে জিম্মি থাকা সকল ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে হবে একযোগে।”
চাপের মুখে হামাস, তবে এখনও নিশ্চুপ
এই প্রস্তাবের পরও হামাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন শর্ত হামাসের জন্য আত্মসমর্পণের শামিল। একদিকে ধ্বংসস্তূপ, অন্যদিকে জনগণের চাপ—হামাসের সামনে এখন কঠিন দ্বিধাদ্বন্দ্ব।
ইসরায়েলি আগ্রাসন: নির্মূলের অজুহাতে নির্মমতা
ইসরায়েল গত দেড় বছর ধরে হামাসকে ‘নির্মূল’ করার অজুহাতে গাজায় চালিয়ে যাচ্ছে লাগাতার সামরিক অভিযান। মানবিক বিপর্যয়ের এই প্রেক্ষাপটে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৩,০০০ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশুও রয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে হাজারো মরদেহ। হাসপাতাল, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র—কোনো কিছুই রেহাই পায়নি।
যুদ্ধের ব্যর্থতা ঢাকতে নতুন কৌশল?
যদিও এত হত্যাযজ্ঞের পরও গাজায় হামাস সদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতি প্রমাণ করে, ইসরায়েল তার যুদ্ধের মূল লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ। ফলে নেতানিয়াহু প্রশাসনের এই ‘শান্তিপ্রস্তাব’ অনেকের চোখে যুদ্ধের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকার একটি নতুন কৌশল।
গত ১৮ মার্চ গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে পুনরায় ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF)। তখন থেকেই হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি সংগঠন এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে।
কাতারে আলোচনা ও মার্কিন তৎপরতা
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারে আলোচনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
হামাস দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছিল। এবার নেতানিয়াহুর প্রশাসনও তাদের অবস্থানে পরিবর্তন এনে যুদ্ধবিরতির পথ খুলেছে, যদিও তাতে যোগ হয়েছে অত্যন্ত কঠোর রাজনৈতিক ও কৌশলগত শর্ত।
শেষ কোথায় এই যুদ্ধের?
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই শর্তে হামাস সম্মত হলে তা গাজার ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা বয়ে আনবে? তারা কি অস্ত্র ফেলে রাজনীতির পথে আসবে, না কি আরও কঠিন সংঘর্ষের পথে যাবে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের এই প্রস্তাবের জবাবে হামাস যদি কৌশলগতভাবে শান্তির পথ বেছে নেয়, তবে তা হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। কিন্তু অতীতের মতোই যদি শর্তগুলোকে আত্মসমর্পণের ফাঁদ হিসেবে গণ্য করে তারা, তাহলে সামনে আরও ভয়াবহ সংঘর্ষ অপেক্ষা করছে।
ইসরায়েলের কঠোর শর্তসাপেক্ষ যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে গাজা উপত্যকায়। যুদ্ধের ক্লান্তিতে জর্জরিত ফিলিস্তিনিরা চায় শান্তি, কিন্তু সে শান্তি আসবে কীভাবে—তার পথ এখনও ধোঁয়াশায় ঢাকা।



















