close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নরসিংদীতে কসাই চক্রের ভয়াল থাবা: যাত্রীবেশে জবাই করে ছিনতাই..

Mehedi Hasan avatar   
Mehedi Hasan
অটোচালক দেলোয়ার ও ইউনুস অপু হত্যার রহস্য উন্মোচিত, ছিনতাইকৃত অটোরিকশা ও অস্ত্রসহ ‘কসাই ইসমাইল’ চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার..

রিপোর্ট মেহেদী হাসান: নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় একের পর এক অটোরিকশা চালককে যাত্রীবেশে ডেকে নিয়ে নৃশংসভাবে জবাই করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিচ্ছিল এক ভয়ংকর কসাই চক্র। বহুদিনের আতঙ্কের অবসান ঘটিয়ে এই চক্রের মূল হোতা ‘কসাই ইসমাইল’ সহ আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এই ঘটনায় পুলিশ উদ্ধার করেছে ছিনতাইকৃত অটোরিকশা, নিহতদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও ছুরি।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ জুন ২০২৫, দুপুর ১টার দিকে। গজারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা অটোরিকশা চালক দেলোয়ার (৩০) প্রতিদিনের মতো অটো নিয়ে বের হন, কিন্তু আর ফেরেননি।

পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পলাশ থানার ধনাইরচর এলাকার একটি কলাবাগানে রাস্তার পাশে তার মরদেহ পাওয়া যায়—গলা কাটা, ভুড়ি বের হয়ে আছে, শরীরজুড়ে ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত, এবং মৃতদেহ উলঙ্গ অবস্থায় পড়ে আছে। নৃশংসতায় স্তব্ধ হয়ে যায় স্থানীয় জনতা।

পুলিশ জানায়, গত বছরের ১ নভেম্বর একই পদ্ধতিতে অটোচালক ইউনুস অপু-কেও হত্যা করা হয়। তার মরদেহও পাওয়া গিয়েছিল একটি কলাবাগানে, গলা কাটা অবস্থায়। দুই ঘটনার চাঞ্চল্যকর মিল দেখে তদন্তে গতি আনা হয়, আর সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর এই ছিনতাই চক্রের হদিস।

নিহত দেলোয়ারের স্ত্রীর দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে ১৬ জুন দিবাগত রাতে অভিযান চালায় পলাশ থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে: মোঃ ইসমাইল মৃধা ওরফে কসাই ইসমাইল (২৫) — পেশায় কসাই ও অটোরিকশা চালক, শাকিল (২৯) — পেশায় কসাই ও মোঃ কবির হোসেন ওরফে ইঞ্জিনিয়ার কবির (৫৪)— পেশায় অটোরিকশা মেকানিক।

তাদের সবার বাড়ি পলাশ ও নরসিংদী সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ঙ্কর সব তথ্য দিয়েছে।
তারা যাত্রী সেজে চালকদের নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে চাপাতি ও ছুরি দিয়ে জবাই করে হত্যা করত, পরে লাশ কলাবাগানে ফেলে রেখে অটোরিকশা ও মূল্যবান জিনিস নিয়ে পালিয়ে যেত।

উদ্ধারকৃত আলামতের তালিকা: ছিনতাইকৃত অটোরিকশা – ১টি, নিহতদের মোবাইল ফোন – ২টি, হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি – ২টি, ধারালো ছুরি – ৩টি ও ভিকটিমের পকেট থেকে পাওয়া নগদ টাকা – ৫৮০ টাকা।

অভিযান ও তদন্ত টিমে ছিলেন যাঁরা:
মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিপিএম – অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল।
ওসি মোঃ মনির হোসেন – অফিসার ইনচার্জ, পলাশ থানা।
এসআই মোঃ কামরুল ইসলাম– মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এসআই শেখ মোঃ জসিম উদ্দিন (ডিবি)– সহযোগী কর্মকর্তা।

পুলিশ বলছে: “এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে একইভাবে অটোচালকদের টার্গেট করে ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। তাদের গ্রেপ্তার এই অঞ্চলের জন্য বড় সাফল্য।”

নরসিংদীর সাধারণ মানুষ ও নিহতদের পরিবার পুলিশ প্রশাসনের এ সাফল্যে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, যেন এই চক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।

No comments found


News Card Generator