বাংলাদেশে মাদকের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা নকল ইয়াবার বাজার বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, নকল ইয়াবা সেবনে তাৎক্ষণিক মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জব্দকৃত ইয়াবার প্রায় অর্ধেকই ভেজাল। রাসায়নিক পরীক্ষাগারের তথ্য অনুযায়ী, এসব ইয়াবার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত থাকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডা. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, "আমরা দিনে যে কয়টি ইয়াবার নমুনা পরীক্ষা করি, তার মধ্যে ৪-৫টি চালানে নকল বা ভেজাল ইয়াবা থাকে।"
নকল ইয়াবা তৈরিতে গর্ভনিরোধক পিলসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা মাদকসেবীদের শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, "প্রায় প্রতিদিনই জব্দকৃত চালানে নকল ইয়াবার নমুনা পাচ্ছি। গত এক বছরে কমপক্ষে এক হাজার ইয়াবা চালানের নমুনায় ভেজাল পেয়েছি।"
ইয়াবা সেবনের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের অধ্যাপক ড. মোহিত কামাল জানান, "ইয়াবা সেবনে হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, কিডনি সহ শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি এটি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।"
ভেজাল ইয়াবার পাশাপাশি, দেশে ভেজাল মদেরও বিস্তার ঘটছে। বছরের প্রথম মাসেই ভেজাল মদপানে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। মদপানে মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিষাক্ত মদকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা মাদকসেবীদের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছেন। তারা মনে করেন, মাদকসেবীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারলে এ ধরনের ভেজাল মাদকের প্রভাব কমানো সম্ভব। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে, যাতে মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য কমানো যায়।