নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের হঠাৎ করে একটি ঝটিকা মিছিল এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর নয়াবাড়ি এলাকায় মিছিলটি অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’—এই স্লোগান দিতে দিতে অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
বিষয়টি প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দাদের মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিওর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর মুহূর্তেই তা প্রশাসনের নজরে আসে এবং শুরু হয় তৎপরতা।
পাঁচ আগস্টের পর প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি:
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্টের ঘটনার পর থেকেই সোনারগাঁ উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর সকল ধরনের প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এটাই ছিল প্রথম কোনো বড় আকারের মিছিল, যা সরাসরি আওয়ামী লীগের ব্যানারে হয়েছে বলে ধারণা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এই ঝটিকা মিছিলটি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানারে হলেও এর পেছনে রাজনৈতিক মদদ থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই ধরনের কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে দুঃসাহসিক এবং প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এর মাধ্যমে তারা হয়তো তাদের উপস্থিতি জানান দিতে চাইছে।”
ভিডিও ফুটেজ ঘোলাটে, কিন্তু তদন্ত শুরু:
ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ-সার্কেল) আসিফ ইমাম গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা একটি ঝটিকা মিছিলের বিষয়টি জেনেছি। ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছি, তবে সেটি ঘোলাটে হওয়ায় কারা অংশ নিয়েছে তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি এবং তাদের আটকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভিডিও বিশ্লেষণ করতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) টিম ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছে। প্রয়োজনে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ভিডিও ফ্রেম বাই ফ্রেম বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্টদের শনাক্ত করা হবে।
রাজনৈতিক উত্তেজনা ও প্রশাসনের উদ্বেগ:
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। কারণ, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত থাকলেও, এই মিছিলের মাধ্যমে তারা আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দিতে চাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোনারগাঁ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এ ধরনের হঠাৎ কর্মসূচিকে বরদাস্ত করবো না। কারা এতে জড়িত তা খুব শিগগিরই বেরিয়ে আসবে।”
শেষ কথা:
ঘোলাটে ভিডিও ফুটেজ, নিষিদ্ধ সংগঠনের সক্রিয়তা, এবং পুলিশের তদন্ত—সব মিলিয়ে কাঁচপুরের এই ঘটনাটি স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারে।