স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। মুহুরী সেচ প্রকল্পের ভাটিতে ইছাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ইতোমধ্যে সিডিএসপি বাঁধের প্রায় ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অধিকাংশ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মুহুরী সেচ প্রকল্পের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১,১০০ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে পলির স্তর জমে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সোনাগাজীর লামছি এলাকায় জেগে উঠছে ছোট ছোট চর। অন্যদিকে মিরসরাই অংশের উত্তর ইছাখালী এলাকায় নদীভাঙনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আতাউল্ল্যাহ রনি বলেন, “২০১৯ সাল থেকে মুহুরী সেচ প্রকল্পের মুখে পলি জমতে শুরু করে। এরপর থেকেই বর্ষায় ভাঙনের মাত্রা বাড়ে। প্রায় তিন দশকে এমন দৃশ্য দেখিনি।” কৃষক রাহাত হাসান বলেন, “পলি খনন না করলে ভাঙন বন্ধ হবে না। নদীর আচরণ বদলে গেছে, এই বয়সে এমন ভাঙন আগে দেখিনি।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সময় সিসি ব্লক স্থাপন করলেও সেগুলো টিকতে পারেনি। বর্তমানে কোথাও বাঁধ ও নদীর দূরত্ব মাত্র ৫-১০ মিটার। ফলে বর্ষা জুড়ে ভয়াবহ নদীভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছেন মৎস্য প্রকল্প মালিকরা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে নির্মিত এই বাঁধ ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত মৎস্য খামার চট্টগ্রামের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ মাছের জোগান দেয়। বাঁধ রক্ষায় এখনই উদ্যোগ না নিলে শুধু মৎস্য খামার নয়, মিরসরাইয়ের ৩৪ হাজার একর এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বিইজেড)-এর একাংশও হুমকির মুখে পড়বে।
মিরসরাই উপজেলার ওচমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের ১০০টিরও বেশি গ্রামে লবণাক্ত পানির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে দেখা দিতে পারে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা ও বন্যা।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, “বাঁধ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।”
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে জিও ব্যাগ ফেলাসহ মেরামত কাজ দ্রুত শুরু হবে।”
স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী ও টেকসই সমাধান ছাড়া মিরসরাইয়ের উপকূলীয় অঞ্চল এবং মৎস্য খাত বারবারই দুর্যোগের মুখে পড়বে। তাই বর্ষা শুরুর আগেই দ্রুত কার্যকর ও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।



















