আগামী জাতীয় নির্বাচনের পরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন খ্যাতিমান সাংবাদিক, লেখক এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান।
শনিবার (তারিখ উল্লেখ করা হয়নি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। পাশাপাশি তিনি নির্বাচনোত্তর জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষে জোরালো মত প্রকাশ করেন এবং দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সমঝোতার আহ্বান জানান।
জাতীয় সরকারের প্রস্তাব
ফেসবুক পোস্টে মারুফ কামাল খান লিখেছেন:
“ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে নির্বাচনোত্তর জাতীয় সরকার হচ্ছে বিএনপির অঙ্গীকার। সেই ফয়সালাটা চটজলদি করে ফেলুন। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিণতি কিন্তু খুব খারাপ হবে। সমঝোতা ও ঐক্যই সাফল্যের একমাত্র পথ এখন। সবাই মিলে দেশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেই তো সব ঝুট ঝামেলা চুকে যায়।”
এ বক্তব্যে স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক বিরোধ ও অচলাবস্থা নিরসনে সমঝোতাপূর্ণ পথ অবলম্বনকেই তিনি দেখছেন জাতীয় ভবিষ্যতের একমাত্র কার্যকর দিক।
সরকার ও বিরোধী দল নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা
সরকার এবং বিরোধী দলের গঠনতন্ত্র কেমন হওয়া উচিত, সে প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন:
“বিরোধী দলের ভূমিকায় কারা থাকবে তাও নির্ধারণ করে ফেলা যায়। আমার চিন্তা মডারেট এবং রব, মান্না, সাকি, সাইফুল হকদের মতো লিবারাল বামেরা বিএনপির সঙ্গে সরকারে থাকবে আর ইসলামিস্টরা থাকবে বিরোধী দলে।”
এখানে তিনি স্পষ্ট করে এক দ্বিমুখী রাজনৈতিক কাঠামোর কথা বলেছেন যেখানে উদারপন্থী ও প্রগতিশীল নেতারা সরকারের অংশীদার হবেন, এবং ইসলামপন্থীরা একটি গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবেন।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ ও ড. ইউনূসের ভূমিকা
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটি জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন:
“আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও সর্বসম্মত একটা সিদ্ধান্ত দরকার। নির্বাচনের পরেও **ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতাকে সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার কাজে লাগালে অনেক বড় ফায়দা হাসিল হতে পারে।”
এই বক্তব্যে স্পষ্টতই তিনি ইঙ্গিত করেছেন, রাজনৈতিক মতানৈক্য ভুলে গিয়েও ড. ইউনূসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত ব্যক্তিত্বকে দেশের ব্র্যান্ডিং ও কূটনৈতিক পরিচিতি তৈরিতে কাজে লাগানো উচিত।
ইউটোপিয়া নয়, বাস্তব সম্ভাবনা
পোস্টের শেষাংশে মারুফ কামাল খান বলেন:
“আমি মনে করি, এগুলো মোটেও ইউটোপিয়া নয়। সবাই ভেবে দেখতে পারেন। চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের বিজয় জাতীয় জীবনে যে অমিত সম্ভাবনা এনেছে সংকীর্ণ স্বার্থে ও আত্মশ্লাঘায় আমরা যেন তা ধ্বংস না করি।”
এই বক্তব্যে তিনি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে বাস্তবিক ভিত্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মারুফ কামালের এই ফেসবুক পোস্টটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে। যেখানে জাতীয় ঐক্য, রাজনৈতিক সহাবস্থান, আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং জনস্বীকৃত ব্যক্তিত্বের সদ্ব্যবহার—সবই উঠে এসেছে এক সুসংবদ্ধ পরিকাঠামোর অংশ হিসেবে।
এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ও বিতর্ক আরও তীব্র হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।