close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

নির্বাচন ইস্যুতে ফের বিপরীত মেরুতে বিএনপি-জামায়াত

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় দুই দলের ভিন্নমুখী অবস্থান
বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি সবসময়ই অনিশ্চিত ও চমকপ্রদ। বিশেষ করে, গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তীকালে এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন..

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠিত হলে দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে আলোচনা শুরু হয়। বিএনপি প্রথম দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে মাত্র তিন মাস সময় দিলেও পরে নির্বাচনের জন্য আরও "যৌক্তিক সময়" দেওয়ার কথা বলে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী টেকসই সংস্কারের পক্ষে অবস্থান নেয়, এবং দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না।

ঘনিষ্ঠতা থেকে দূরত্ব: বিএনপি ও জামায়াতের ভিন্ন কৌশল

শুরুতে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মাঝে একধরনের ঐক্যের ইঙ্গিত মিললেও, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদের অবস্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রথমে বলেছিলেন, আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এরপর শর্তযুক্ত বক্তব্য এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবির মাধ্যমে তিনি নির্বাচন নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা সৃষ্টি করেন। ময়মনসিংহের এক সমাবেশে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই।

অন্যদিকে বিএনপি এখনও তাদের পূর্বের অবস্থানে অটল। দলটির নেতারা স্পষ্টভাবে বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন চাই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "সংস্কারের জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা নয়। চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।"

জামায়াতের বারবার অবস্থান বদল এবং বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের অবস্থানে এই অনিশ্চয়তা দলটির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, "জামায়াতের প্রধান নেতার বক্তব্যে বারবার ভিন্নতা জাতির মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এর ফলে জামায়াত জনগণের কাছে দুর্বল হয়ে পড়ছে।"

বিশ্লেষকদের মতে, একটি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দিষ্ট নীতি ও কৌশলের অভাব থাকলে তা দলীয় ভিত্তি দুর্বল করে। জামায়াতের বারবার অবস্থান বদল দলটির ভেতরে অনিশ্চয়তার সংকেত দিচ্ছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য একটি অশনি সংকেত হতে পারে।

আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়সূচি এবং জাতীয় নির্বাচন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বড় আকারের সংস্কার হলে নির্বাচন জুন ২০২৬ পর্যন্ত গড়াতে পারে, তবে ছোট আকারের সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেও সম্ভব। এ অবস্থায় বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়, আর জামায়াত এখন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের শর্ত জুড়ে দিয়ে তাদের অবস্থান আলাদা করেছে।

 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতের দীর্ঘদিনের সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের কৌশলগত অবস্থানের এই পার্থক্য রাজনৈতিক বাস্তবতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সামনে দিনগুলোতে দুই দলের মধ্যে সমন্বয় নাকি আরও দূরত্ব—তা হবে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যতের বড় প্রশ্ন।

کوئی تبصرہ نہیں ملا