নগরের উন্নয়নকাজ কেন বন্ধ থাকবে

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে ৪০ দিন বন্ধ ছিল নগর ভবন। কিছু বিভাগ খুললেও প্রকৌশলীরা অনুপস্থিত। থেমে আছে উন্নয়নকাজ, সেবাবঞ্চিত কোটি মানুষ।..

৪০ দিন তালাবদ্ধ ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবন। তবে এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটে সোমবার, যখন অবশেষে ভবনটির প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু অর্ধেক দরজা খোলা মানেই সব কিছু স্বাভাবিক নয়—এখনো তালাবদ্ধ প্রকৌশল বিভাগের কক্ষগুলো, অনুপস্থিত সেখানকার কর্মকর্তারা। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে নগরের উন্নয়ন কার্যক্রমে। প্রশ্ন উঠেছে—এই শহরের উন্নয়নকাজ কি একদল রাজনীতির সমর্থকের ‘কৃপায়’ চলবে?

রোববার সকালের আলোয় খুলে গেলো নগর ভবনের প্রধান ফটক। তবে ভবনের ভিতরে ঢুকলেও সব বিভাগে প্রাণ ফেরেনি। নাগরিক সেবা বিভাগে কিছুটা কার্যক্রম শুরু হলেও প্রকৌশল বিভাগ এখনো অচল। ভবনের বাইরে থাকা আটটি আঞ্চলিক কার্যালয়ের অবস্থাও এক। প্রকৌশলীরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত, দরজায় ঝুলছে তালা। ঢাকাবাসীর জন্য যার অর্থ—উন্নয়ন কার্যক্রম এখনো বন্ধ।

ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, “আন্দোলন পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে নাগরিক দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাই ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।”

মূল ঘটনা ২০২০ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শুরু। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেন জয়ী হন এবং তাঁর নামে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু আইনি জটিলতা ও উচ্চ আদালতের রিট আবেদনের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে।

এরই প্রেক্ষিতে ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা নগর ভবনের দখল নিয়ে আন্দোলনে নামেন। পরবর্তীতে সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। আন্দোলন এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, ইশরাককে ‘জনগণের মেয়র’ ঘোষণা করে অভিষেকেরও আয়োজন চলে। তাঁরা স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সরকার নিযুক্ত প্রশাসককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইশরাকের এই কার্যক্রম ফৌজদারি অপরাধের শামিল। আইনি পথে সমস্যার সমাধান সম্ভব হলেও তা আর হয়নি। কারণ বিষয়টি রূপ নেয় ‘মর্যাদার লড়াই’-এ। একদিকে আন্দোলনরত সমর্থকেরা, অন্যদিকে সরকারের প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ—ফলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

আরো জটিলতা হয় যখন জানা যায়, নির্বাচিত মেয়রের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ফলে তাঁকে শপথ পড়ানোর সুযোগও আর নেই। এ অবস্থায় উপদেষ্টা বলেন, “ইশরাক নগর ভবন না ছাড়লে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে।” কিন্তু বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার—জাতীয় নির্বাচনের আগে আর কোনো নির্বাচন নয়।

এই রাজনৈতিক অচলাবস্থার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী নগরবাসী। এক কোটি মানুষ জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, হোল্ডিং ট্যাক্স, চারিত্রিক সনদের মতো দৈনন্দিন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, অথচ মশক নিধনের কার্যক্রম থেমে আছে।

অর্থবছর শেষ হতে চলছে ৩০ জুন। এ সময়ের মধ্যে চলতি প্রকল্পগুলো শেষ না করলে বরাদ্দকৃত অর্থ ফেরত যাবে। যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নাগরিক জীবনকে সহজতর করার কথা, সেটি এখন পুরোপুরি থেমে আছে কিছু মানুষের ‘আন্দোলনের কৃপায়’।

যাঁরা জনগণের জন্য রাজনীতি করেন, তাঁদের উচিত জনগণের দুর্ভোগের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে, তবে তা যেন প্রশাসন ও উন্নয়নকে জিম্মি করে না ফেলে। আন্দোলন হোক, প্রতিবাদ হোক—সবকিছুরই সীমা থাকা উচিত।

৪০ দিন পর নগর ভবন খুললেও প্রকৌশল কার্যক্রম এখনো বন্ধ থাকায় যে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে, তা গণতন্ত্র ও প্রশাসনের জন্য ভয়ংকর। নাগরিকদের ন্যূনতম অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তা কেবল রাজনীতির ব্যর্থতা নয়—মানবিকতার চূড়ান্ত অবমূল্যায়ন।

সেই কারণেই এখনই প্রয়োজন—কোনো শর্ত ছাড়া, ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা। উন্নয়ন আর নাগরিক সেবা যেন আর এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ না থাকে।

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator