close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

নগদে আতিক মোর্শেদের স্ত্রীর নিয়োগে দু'র্নী'তি'র প্রাথমিক প্রমাণ, অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নগদে প্রধান উপদেষ্টার সহকারীর স্ত্রীর চাকরি পাওয়া নিয়ে দুর্নীতির গন্ধ পেয়েছে দুদক। গুলশান অফিসে অভিযান চালিয়ে পাওয়া গেছে অসঙ্গতির প্রমাণ। একইসঙ্গে চলছে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত।..

দেশের অন্যতম মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর অভ্যন্তরে নিয়োগ ও অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ তদন্তের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির গুলশান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নগদের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার স্ত্রীর বিতর্কিত নিয়োগে প্রাথমিক অনিয়মের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

রবিবার (১ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা নগদের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেন। অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক ইকরাম হোসেন জানান, “নগদে অভিযান চালিয়ে আমরা ICT-বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আতিক মোর্শেদের স্ত্রীর নিয়োগে অসঙ্গতির প্রমাণ পেয়েছি।”

মেধা নাকি প্রভাব—দুদকের প্রশ্ন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আতিক মোর্শেদ নগদের এক প্রভাবশালী কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার স্ত্রী কীভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ পেলেন, সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না এবং নিয়ম অনুযায়ী যোগ্যতাভিত্তিক প্রতিযোগিতার কোনো প্রমাণও মেলেনি।

অন্যদিকে, আতিক মোর্শেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করেছেন, তার স্ত্রীর নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছে। ৩০ মে তারিখে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর চাকরি নিয়ে যে সকল গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি নিজ যোগ্যতায় নগদে চাকরি পেয়েছেন।”

১৫০ কোটি টাকার বিল ভাউচার কেলেঙ্কারির তদন্তও চলছে

দুদক কর্মকর্তারা আরও জানান, শুধু নিয়োগ নয়, নগদের অভ্যন্তরে বিল-ভাউচার সংক্রান্ত আরও বড় ধরনের অর্থ কেলেঙ্কারির প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে। গত দুই মাসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে, যা বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন।

এ বিষয়ে ইকরাম হোসেন বলেন, “এই দুর্নীতির সঙ্গে কারা জড়িত, তা অনুসন্ধানে আমরা বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করছি। নগদের আর্থিক লেনদেন ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে আরও বড় ধরনের দুর্নীতির আলামতও পাওয়া যাচ্ছে।”

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের সরল স্বীকারোক্তি: ‘ভুল হয়েছে’

আলোচিত এই নিয়োগ এবং কর্মকর্তার স্বজনকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগের পর, নগদের প্রধান উপদেষ্টার ICT বিষয়ক সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক বিবৃতি দিয়েছেন। শনিবার (৩১ মে) তিনি নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের অভিযোগ এসেছে। আমি এটা স্বীকার করছি, কাজটি সঠিক হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “তাকে আমি তীব্রভাবে সতর্ক করেছি এবং ওই নিয়োগের বিষয়ে আমি নিজেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।”

এই বক্তব্যে কিছুটা দায় স্বীকার করলেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—নগদের মতো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এত বড় পর্যায়ের অনিয়ম কীভাবে চললো, প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা তখন কোথায় ছিলেন? তদন্ত প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রশ্নের উত্তর অধরাই থেকে যাচ্ছে।

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া, বিল-ভাউচার এবং আর্থিক লেনদেনসহ নগদের আরও নানা দিক থেকে নথি সংগ্রহ ও যাচাই চলছে। যদি অপরাধের চূড়ান্ত প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি রয়েছে।

অন্যদিকে নগদের অভ্যন্তরীণ বিভাগ থেকেও একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে সূত্র জানায়। তবে প্রতিষ্ঠানটি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।

নগদে স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নতুন কিছু নয়, তবে এবার বিষয়টি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থা দুদকের অনুসন্ধানে আসায় ব্যাপারটি গভীর গুরুত্ব পেয়েছে। তদন্তে যদি অনিয়মের পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ মেলে, তাহলে সেটি শুধু একটি নিয়োগকেই নয়—সমগ্র প্রতিষ্ঠানকেই কাঁপিয়ে দিতে পারে।

לא נמצאו הערות


News Card Generator