close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

নেতানিয়াহুকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে, বললেন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নাফতালি বেনেট বলেন, নেতানিয়াহুর বিদায়ের সময় এসেছে। বিভক্ত ইসরায়েলের দায় তার কাঁধেই। গাজা যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে মুখ খুললেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।..

ইসরায়েলের রাজনীতিতে এক বড়সড় ঢেউ তুলেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট। সম্প্রতি দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল ‘চ্যানেল ১২’-এ দেওয়া এক বিস্ফোরক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “নেতানিয়াহুর বিদায়ের সময় এখনই।” তাঁর মতে, দীর্ঘ দুই দশকের শাসনকাল এখন ইসরায়েলের সমাজে বিভাজন, অনিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্ম দিয়েছে।

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন... এটা খুব বেশি হয়ে গেছে। এটি আর ইতিবাচক কিছু বয়ে আনছে না।”

এই সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচারিত হয় শনিবার রাতে, এবং এর পরপরই ইসরায়েলি রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। যদিও তিনি নিজে আবারও নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সে প্রশ্নটি সরাসরি এড়িয়ে গেছেন।

বেনেট ইঙ্গিত দেন যে, নেতানিয়াহুর দীর্ঘ মেয়াদি শাসনের ফলে ইসরায়েলি সমাজে যে বিভক্তির রেখা গভীর হয়েছে, তার জন্য মূলত দায়ী এই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভারসাম্য ভেঙে পড়েছে। জনগণের আস্থা দিন দিন ক্ষয়ে যাচ্ছে।”

২০২১ সালে বেনেট একাধিক নেতানিয়াহুবিরোধী দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করেন। এই জোটের মাধ্যমে তখনকার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর টানা ১২ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

তবে ওই সরকার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বেনেট ও বিরোধী নেতা ইয়ার লাপিদের নেতৃত্বে গঠিত সরকার এক বছরের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। পরবর্তী নির্বাচনে আবারো ডানপন্থী ও কট্টর ইহুদি দলগুলোর সমর্থন নিয়ে নেতানিয়াহু ফিরে আসেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে।

বেনেট এখন রাজনীতি থেকে কিছুটা দূরে রয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক এই সাক্ষাৎকার, তাঁর সক্রিয় মন্তব্য এবং গোপন বৈঠকগুলো ঘিরে রাজনীতিতে তাঁর ‘ফিরে আসা’ নিয়ে গুঞ্জন আবারও জোরালো হয়ে উঠেছে। জনমত জরিপ বলছে, চাইলে বেনেট আবারও নেতানিয়াহুকে নির্বাচনে হারানোর মতো জনপ্রিয়তা পেতে পারেন।

তবে ২০২৬ সালের শেষ ভাগের আগে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও ইসরায়েলের ইতিহাস বলে, আগাম নির্বাচনের ঘটনা সেখানে প্রায়শই ঘটে।

সাক্ষাৎকারে বেনেট আরও দাবি করেন, ইরানের সামরিক ও পরমাণু স্থাপনায় ইসরায়েলের যে সাম্প্রতিক হামলা হয়েছে, তার পরিকল্পনার ভিত্তিপ্রস্তর তিনিই স্থাপন করে গেছেন।

তিনি বলেন, “এই হামলা খুব দরকার ছিল এবং এটা সঠিক সিদ্ধান্ত। আমার সরকারের সময় থেকেই এই প্রস্তুতি চলছিল, না হলে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে ইসরায়েলে ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধকে ঘিরে নেতানিয়াহুর ভূমিকা নিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

বেনেট বলেন, “গাজায় আমাদের সেনাবাহিনী অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা গোটা দেশকে অচল করে দিচ্ছে।”

গাজায় হামাসের হাতে যারা এখনো জিম্মি রয়েছেন, তাদের বিষয়ে বেনেট বলেন, “তাদের মুক্ত করতে একটি সমন্বিত ও জরুরি চুক্তি দরকার। এটি আর বিলম্ব করা চলবে না।”

তিনি নেতানিয়াহুকে ইঙ্গিত করে বলেন, “হামাসকে ধ্বংস করার দায়িত্ব ভবিষ্যতের সরকারকে দিন। এখন জিম্মিদের নিয়ে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিন।”

নিজে নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এ প্রশ্নে একাধিকবার চাপ দেওয়া হলেও বেনেট সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এভাবে জাতীয় পর্যায়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের জমিন তৈরি করছেন।

নাফতালি বেনেটের এই সাক্ষাৎকার ইসরায়েলের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের বার্তা দিতে পারে। নেতানিয়াহুর প্রতি তাঁর স্পষ্ট ও কঠোর সমালোচনা এখন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বেনেটের ‘ঘুরে আসা’ কেবল সময়ের ব্যাপার বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

コメントがありません