শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা:
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিক নির্যাতন ও নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় একটি গণপ্রতিবাদ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৩০ জুন '২৫) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরার সুলতানপুর পিএন হাইস্কুল মাঠে এই প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
এই কর্মসূচির আয়োজন করে স্বদেশ, এমএসএফ, সিডো, উত্তরণ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ ১০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন প্রফেসর মোজাম্মেল হক, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, রঘুনাথ খাঁ, শ্যামল বিশ্বাস, লুইস রানা গাইন, রুপা বসু, নাজমা আক্তার, ময়না এবং আলী নূর খান বাবুল।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে কুমিল্লার মুরাদনগরে সংঘটিত একটি নারকীয় ঘটনার নিন্দা জানান। গত ২৬ জুন রাতে, মুরাদনগর উপজেলার একটি গ্রামে ঘরে ঢুকে এক গৃহবধুকে বিবস্ত্র করে ধর্ষণ করা হয় এবং সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
লালমনিরহাটে, চুল কাটার জন্য ১০ টাকা কম দেওয়ায় সেলুন মালিক পরেশ চন্দ্র শীল এবং তার ছেলে বিষ্ণুচন্দ্র শীলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে নির্যাতন করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ক্ষেত্রে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরন্নবীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বক্তারা শ্যামনগরের বনশ্রী শিক্ষা নিকেতনের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী শ্রাবন্তী মণ্ডলের অপহরণ এবং আশাশুনির পার কাদাকাটি গ্রামের ঝুমা মণ্ডলের অপহরণের ঘটনাগুলোর বরাত দিয়ে বলেন, পুলিশ কোন সাধারণ ডায়েরী বা মামলা নিচ্ছে না এবং তাদের উদ্ধারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
খুলনার বটিয়াঘাটায় কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা, গোপালগঞ্জের নারী অপহরণ ও হত্যার চেষ্টার ঘটনা এবং আশাশুনির ঘোলা ত্রিমোহিনীতে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর লাশ উদ্ধারের ঘটনা উল্লেখ করে বক্তারা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
এছাড়াও, সাতক্ষীরাসহ সারা দেশে মন্দিরের জায়গা এবং সংখ্যালঘুদের জমি দখলের ঘটনা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বক্তারা জানান যে, গত পাঁচ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের ৯১০০ ঘটনার মামলা হয়েছে এবং ৬৫,০০০ এর বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তারা দাবী করেন, ধর্ষণের মামলায় কোনো আইনজীবী যেন ধর্ষকের পক্ষে দাঁড়াতে না পারেন।
এই গণপ্রতিবাদ সভা নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং তাদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অপরাধের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।



















