মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণ! ঢাকা থেকে অপহৃত এসএসসি পরীক্ষার্থী আরেফিন সাতক্ষীরা থেকে উদ্ধার..

শেখ আমিনুর হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার: avatar   
ঢাকা থেকে অপহৃত এসএসসি পরীক্ষার্থী আরেফিন সাতক্ষীরা থেকে উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের অভিযানে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং অপহৃতদের গ্রেপ্তারের জন্য চিরুনি অভিযান অব্যহত রেখেছে পুলিশ..

শেখ আমিনুর হোসেন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা: ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে অপহৃত এসএসসি পরীক্ষার্থী আরেফিন কামরুল ইসলামকে (১৭) উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (১২ এপ্রিল '২৫) ভোর সাড়ে চারটার দিকে সাতক্ষীরার নিউমার্কেট এলাকার একটি চায়ের দোকান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। 

সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ ইমরান হোসেন বাংলাদেশ মেইলকে জানান, রামসপুরা থানার ম্যাসেজ পেয়ে সদর থানার একটি টিম ভোর রাতে নিউমার্কেট এলাকা থেকে আরেফিন কামরুল ইসলামকে উদ্ধার করে। তাকে সাতক্ষীরা সদর থানার নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে রামপুরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। 

এদিকে, সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা আরেফিন কামরুল ইসলাম বাংলাদেশ মেইলকে জানায়, সে ঢাকার খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সে রামপুরার বাসা থেকে ল্যাপটপ মেরামতের উদ্দেশ্যে রমজান নামক বাসে এ্যালিফ্যান্ট রোডের একটি দোকানে যাচ্ছিল। আফগানিস্থানে ইসরাইলী আগ্রাসন ও হত্যাযজ্ঞের কারণে মিছিলকে ঘিরে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মগবাজার ফ্লাইওভার নামক স্থানে সে বাস থেকে নেমে সামনে হাঁটতে শুরু করে। এক ব্যক্তি তাকে পিছন দিক থেকে ডাক দেয়। পিছন দিকে ফিরতেই সে কতিপয় ব্যক্তি তাকে কয়েকবার ঘাড় ঘুর্ণণ দেয়। এতে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি গাড়িতে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করে। তার কাছে থাকা ল্যাপটপ ও বাটাম ফোনটি নিয়ে নেয়। একটি ঘরে তাকে আটকে রেখে তার দুটি হাত ও পা ক্সস টেপ দিয়ে বেঁধে ফেলে। দুর্বৃত্তরা তাকে ঘরের মধ্যে রেখে চলে যায়।

একপর্যায়ে সে একটি ভাঙা টিন দিয়ে হাতের ও পায়ের বাঁধন কেটে ফেলে চশমার একটি লেন্স খুলে হাতে নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। তাকে যাতে দুর্বৃত্তরা চিনতে না পারে সেজন্য সে গায়ে কাদা মাটি মাখে। কয়েক ঘন্টা পায়ে হেঁটে সাতক্ষীরার নিউমার্কেট এলাকায় একটি চায়ের দোকানে যায়। সেখান থেকে সে তার বাবা হারুণ-অর-রশিদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। শনিবার ভোরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিয়ে যায়।

আরেফিন কামরুল ইসলামের বাবা হারুণ-অর-রশিদ বাংলাদেশ মেইলকে জানান, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি বৃহষ্পতিবার রাতে রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তার ছেলেকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। টাকা না দিলে ছেলেক হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ছেলেকে ছাড়াতে তিনি মেয়ের মাধ্যমে চার দফায় ২৬ হাজার টাকাও বিকাশের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় তিনি পুলিশের শরণাপন্ন হন। ডেমরা, রামপুরা ও নারায়ানগঞ্জের পুলিশ যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জের কয়েক জায়গায় অভিযান চালায়।  শনিবার ভোরে ছেলের ফোন পেয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানাকে অবহিত করেন। পরে তিনি সাতক্ষীরায় আসেন। 

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান বাংলাদেশ মেইলকে জানান, ভিকটিম আরেফিন কামরুলকে নিয়ে আসার জন্য পুলিশ সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। অপহরনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ চিরুনি অভিযান অব্যহত রেখেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, ৫ লাখটাকা মুক্তিপণের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে অপহরণ করা হয় খিলগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী আরেফিন কামরুল ইসলাম। পরে তাকে ফিরে পেতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৬ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এতেও তার ছেলেকে ফিরে পেতে ব্যর্থ হয়ে রামপুরা থানায় একটি জিডি করেন পূর্ব রামপুরা সালামবাগ মসজিদ এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা ও বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার পূর্ব রাজাপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা ব্যবসায়ি  হারুণ-অর-রশিদ।

No se encontraron comentarios


News Card Generator