close
কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ৫৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ, ফাটল-ভাঙাচোরা ভবনের হা
গত এক দশকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৫,৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তবে বেশির ভাগ প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানোর জন্য আওয়ামী সরকার বেশ কিছু মহৎ উদ্যোগ নিলেও তা শেষ পর্যন্ত অনিয়ম আর দুর্নীতির শিকার হয়েছে।
বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি:
২০২১ সালে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ১৩,১২৯টি নির্মাণ করা হলেও বেশির ভাগ ভবনে দেখা গেছে ত্রুটি। নির্মীয়মাণ আরও ৯,০০০ নিবাসের কাজ চলমান থাকলেও সেগুলোতেও নিম্নমানের নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। অনেক জায়গায় ভবনের গাঁথুনি ভেঙে গেছে, কোথাও ফাটল ধরেছে। নকশা অনুযায়ী কাজ করা হয়নি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সবচেয়ে বড় অনিয়ম হয়েছে উপকারভোগী নির্ধারণে। প্রকল্প শুরুর আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। ফলে অনেক সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাও এই সুবিধা পেয়েছেন, যা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রকল্পেও দুর্নীতি:
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান ও আয়ের উৎস তৈরির জন্য নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রকল্পেও দেখা গেছে অবহেলা। নির্মাণের পর বহু ভবন কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কোনো ভবনে ফাটল, আবার কোনো ভবনে পানির ও বিদ্যুতের সংযোগে ত্রুটি দেখা গেছে। ফলে আসবাবপত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেগাপ্রকল্পের দুরবস্থা:
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণের মেগাপ্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষ পরিকল্পনার অভাব এবং দুর্নীতি এই প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতার কারণ।
বিশ্লেষকদের মতামত:
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, "গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। সুশাসনের ভিত্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরিসংখ্যানকে বিকৃত করে এমন উন্নয়নের গল্প তৈরি করা হয়েছে, যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই।"
প্রকল্প বাতিল ও সাশ্রয়:
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিল করে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১,৪২৩ কোটি টাকা, যার মাত্র ১.১৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। বাতিল প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে—
মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ প্রকল্প: ৩৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা
বীরের কণ্ঠে বীরগাথা প্রকল্প: ৪৪ কোটি টাকা
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল ও জাদুঘর উন্নয়ন প্রকল্প: ৩৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা
লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ:
সরকার পরিবর্তনের পর বেশ কয়েকটি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সগুলোতে নথিপত্র, আসবাবপত্র ও বইপত্র লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি কিছু মুক্তিযোদ্ধা নিবাসও ভাঙচুর করা হয়েছে।
উপসংহার:
মুক্তিযুদ্ধ জাতির গৌরবময় অধ্যায় হলেও এর চেতনাকে ব্যবহার করে প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি, লুটপাট এবং নিম্নমানের কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ অপচয় হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অনিয়মের সঠিক তদন্ত ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না করলে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব অক্ষুণ্ণ রাখা কঠিন হবে।
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি



















