ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে কেন্দ্র করে চলমান অচলাবস্থা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা সম্প্রতি এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও স্বঘোষিত মেয়র হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব দেশীয় রাজনীতিতে নানা প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ ও সময় নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির টানাপোড়েন শুরু হয়। ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ইউনূসের মধ্যকার বৈঠকের পর নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য তারিখ রমজান মাসের আগে উল্লেখ করা হয়। এতে বিএনপি ‘উৎফুল্ল’ হলেও ঢাকার দক্ষিণ সিটির মেয়র পদ নিয়ে ইশরাক হোসেনের কার্যক্রম পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছে।
১৬ জুন নগর ভবনে অনুষ্ঠিত একটি সভায় ইশরাক হোসেনকে ‘মাননীয় মেয়র’ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও তিনি এখনও শপথ গ্রহণ করেননি। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রায় ৭০ জন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক ও বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন কাউন্সিলর। এই কার্যক্রম নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে শপথ ছাড়া মেয়র পদে তিনি প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন এবং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এর ফলে অনেকেই ধারণা করছেন, ইশরাক নিজেই নিজেকে ‘স্বঘোষিত’ মেয়র হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
এদিকে, গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনেই ইশরাক ও তাঁর সমর্থকেরা অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন অফিসে তালা ঝুলিয়ে শহরের নাগরিক সেবা প্রায় অচল করে দিয়েছেন। নাগরিকদের অসুবিধার কথা তুলে ধরে সরকার ও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ড কতটা গ্রহণযোগ্য।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘মেয়রের ইস্যুতে সরকার, বিএনপি এবং ইশরাক—তিনিও বাড়াবাড়ি করেছেন।’ সুতরাং, এই অচলাবস্থার দায় এককভাবে কাউকে দেওয়া কঠিন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ নিয়ে সরকারি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ও ইশরাক হোসেনের মধ্যে তীব্র কটাক্ষ ও সমালোচনা চলতে থাকে। আসিফ সজীব ইশরাকের ওপর ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ করার অভিযোগ তুলেন, অপরদিকে ইশরাক সজীবকে ‘মূর্খ উপদেষ্টা’ বলে আখ্যায়িত করেন। রাজনৈতিক বিবাদের এমন উগ্র রূপ কি শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে।
সরকারি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি শহরের অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হওয়ায় জনগণ ভুগছেন। উপদেষ্টা পরিষদের সভায় নগর ভবন অচল করে রাখায় ইশরাকের কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবি জানিয়ে সরকারকে স্পষ্ট বার্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে বিএনপিও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বও সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে চাপের মধ্যে রেখে আগামী নির্বাচনের আগে সমঝোতার পথ তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিএনপি যদি ইশরাক ইস্যুতে আপস করে, তাহলে অন্য কোনো ইস্যুতে আবারও চাপ বাড়ানো শুরু করবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই বিরোধ এখন শুধু একটি মেয়র পদ নিয়ে সংঘাত নয়, এটি সরকারের ক্ষমতা, রাজনৈতিক দায়িত্ব, নির্বাচনী প্রস্তুতি ও নাগরিক সেবার মান নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সমঝোতা এখন সময়ের দাবি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি দেশের রাজনীতিতে এক নতুন চ্যালেঞ্জ এনে দিয়েছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সরকার ও বিএনপির মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছিল। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক শেষে নির্বাচন রমজানের আগেই আয়োজনের সম্ভাবনা প্রকাশ পেয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য সুখবর হলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে এখনও শপথ গ্রহণ না করলেও, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন নগর ভবনে প্রশাসনিক সভা করেছেন এবং সেখানে ‘মাননীয় মেয়র’ হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করেছেন। এতে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যক্রম এবং নাগরিক সেবায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন, যা নাগরিক সেবায় ব্যাপক বিঘ্ন ঘটিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইশরাকের এই কর্মপন্থা ও সরকারের অপ্রতুল প্রস্তুতি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ধাক্কা দিয়েছে।
অপরদিকে, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ইশরাকের ওপর কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, শপথ গ্রহণ না করেই প্রশাসনিক দায়িত্ব নেওয়া ফৌজদারি অপরাধের সমতুল্য। এতে ইশরাকের প্রতি তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ইশরাকও প্রতিহিংসাসূচক মন্তব্য করে আসিফ সজীবকে ‘মূর্খ’ আখ্যা দেন। রাজনৈতিক বিরোধের এই প্রবণতা সাধারণ জনগণের মাঝে অসন্তোষ ও হতাশা তৈরি করছে।
সরকারের ক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় ও চলমান অচলাবস্থার কারণে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ইশরাকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, মেয়র পদে শপথ গ্রহণ না করলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে বিএনপিকে পরিষ্কার বার্তা দেয়া হবে যে তারা রাজনৈতিক চাপের বাইরে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে চায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন ব্যতীত ইশরাক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাই এটি দলীয় একটি কৌশলও হতে পারে সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করতে চাপ সৃষ্টিই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অতএব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইস্যু শুধুমাত্র একটি স্থানীয় প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, নির্বাচন পরিচালনা ও নাগরিক সেবার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলে। সমস্যা সমাধানে সকল পক্ষের সমঝোতা ও দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি।