আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর থেকেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতে আর নিরাপদ বোধ করছেন না। জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় হওয়ার পরপরই তিনি ভারত ছেড়ে এমন কোনো দেশে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই অথবা বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দিবিনিময় চুক্তি নেই। বাংলাদেশের দায়িত্বশীল সরকারি সূত্র এবং ভারতের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র কামালের এই তৎপরতার খবর নিশ্চিত করেছে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কামালকেও ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। রায়ের পরপরই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের কাছে কূটনৈতিক চিঠির মাধ্যমে হাসিনা ও কামালের প্রত্যর্পণ দাবি করে। দিল্লি অবশ্য জানিয়েছে, তারা এই চিঠি 'পর্যালোচনা করে দেখছে'।
ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পরপরই কামাল তার দীর্ঘদিনের আস্তানা কলকাতার রোজডেল এলাকা ত্যাগ করে অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপন করেন। কলকাতায় অবস্থানরত তার নিজ দলের নেতাকর্মীরাও এখন তার নাগাল পাচ্ছেন না। ভারত ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে কামাল তার ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, 'ভারতে বেশিদিন থাকা নিরাপদ মনে করছি না। এখনই আমাকে বিকল্প চিন্তা করতে হচ্ছে।'
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এই আসামিকে ফেরাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক চ্যানেলে যখন যোগাযোগ চলছে, তখনই কামালের ভারত ছাড়ার এই প্রচেষ্টা সামনে আসে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, প্রত্যর্পণের চিঠি পাঠানোর পর কামাল বিচলিত হয়ে পড়েন এবং পুরাতন ঠিকানা বদলে আত্মগোপন করেছেন।
সম্প্রতি ভারতে অবস্থানরত এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে কামাল তার শঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। তিন মিনিটের ওই অডিও রেকর্ডে তিনি স্পষ্ট জানান, তিনি আর পুরোনো ঠিকানায় নেই এবং ভারতেও নিরাপদ নন। তিনি ওই ব্যক্তিকে বলেন, 'আমি তো এখানেও নিরাপদ মনে করছি না। নতুন কোনো চিন্তা করতে হচ্ছে।' ওই কর্মকর্তা মনে করেন, ভারত হয়তো অন্য কোনো নিরাপদ দেশে তাকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য সহযোগিতা করতে পারে।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তিন উপদেষ্টাসহ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বহু নেতা এরই মধ্যে দেশে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। কিন্তু জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কেউ যেন দেশের বন্দর ব্যবহার করে পালাতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। তবে অবৈধ পথে অনেকেই দেশত্যাগ করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও অবৈধভাবেই সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়েছিলেন। এখন তিনি অন্য কোনো দেশে পালানোর জন্য তৎপরতা শুরু করেছেন।



















