close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

মোসাদ্দেক তাহলে অবসরই ঘোষণা করতে পারেন!

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঘরোয়া ও ‘এ’ দলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেও জাতীয় দলে জায়গা না পেয়ে হতাশ মোসাদ্দেক। নির্বাচকদের সোজাসাপ্টা বার্তায় যেন বুঝে গেলেন—এবার সময় বিদায়ের!..

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল থেকে দীর্ঘদিন ধরে দূরে থাকা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কি তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন? সাম্প্রতিক এক ঘোষণায় প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছেন, “মেহেদী হাসান মিরাজ যতদিন আছেন, ততদিন মোসাদ্দেকের জাতীয় দলে সুযোগ নেই।” এমন মন্তব্য যে কোনো ক্রিকেটারের জন্য কঠিন বার্তা, বিশেষ করে তখন, যখন পারফর্ম্যান্স দিয়ে বারবার নিজেকে প্রমাণ করার পরও তিনি নির্বাচকদের নজরে আসতে পারছেন না।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য ঘোষিত ওয়ানডে স্কোয়াডেও মোসাদ্দেকের জায়গা হয়নি। অথচ এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তিনি ছিলেন চ্যাম্পিয়ন দল আবাহনীর প্রধান পারফর্মার। ১৬ ইনিংসে ব্যাট করে তুলেছেন ৪৮৭ রান, ব্যাটিং গড় ৪৮-এর কাছাকাছি, স্ট্রাইক রেট ১০৬-এর ওপরে। শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বল হাতেও ছিলেন দারুণ সফল—নিয়েছেন ৩০ উইকেট, হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা বোলার।

এখানেই শেষ নয়। ‘এ’ দলের হয়ে সর্বশেষ সিরিজেও মোসাদ্দেক ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। বল করে দুটি ম্যাচে নিয়েছেন ৫ উইকেট। সব মিলিয়ে শেষ ১৯ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৫০৪ রান ও ৩৫ উইকেট। এমন পারফর্মারকে কি না জাতীয় দলের আলোচনাতেও রাখা হয়নি!

নির্বাচকরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করছেন মোসাদ্দেক ও মিরাজের “একই প্রোফাইল” দিয়ে। দুজনই ডানহাতি অফস্পিনার, মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। মিরাজ বর্তমানে ওয়ানডে দলের অধিনায়ক এবং তার নেতৃত্বের মেয়াদ অন্তত ২০২৬ সাল পর্যন্ত। এর মানে—মোসাদ্দেকের ফেরার সম্ভাবনা কার্যত শূন্য।

তবে প্রশ্ন উঠছে—এই যুক্তি কতটা গ্রহণযোগ্য? অতীতে বাংলাদেশ দলে একই প্রোফাইলের একাধিক ক্রিকেটার একাদশে জায়গা পেয়েছেন। এমনকি মোসাদ্দেক ও মিরাজ একসঙ্গে বহু ম্যাচ খেলেছেন। তখন তো এই “একই প্রোফাইল” সমস্যা ছিল না! দলের প্রয়োজনে একাধিক অফস্পিনার ও মিডল অর্ডার ব্যাটার খেলানো হয়েছে। তাহলে এখন হঠাৎ কেন বদলে গেল সেই ফর্মুলা?

এই দ্বিমুখী নীতির শিকার কেবল মোসাদ্দেক নন। ১৯ ম্যাচে ৬৬৬ রান করেও বাদ পড়েছেন নুরুল হাসান সোহান। তবে নির্বাচকরা অন্তত তার ব্যাপারে বলেছেন, তিনি বিবেচনায় আছেন। সোহানও আক্ষেপ লুকাননি। বললেন, “জাতীয় দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন না থাকলে ক্রিকেটই খেলতাম না।

কিন্তু মোসাদ্দেকের ভাগ্য আরও নির্মম। তার জন্য নেই কোনো আশার বাণী, নেই ভবিষ্যতের কোনো আলো। বরং নির্বাচকদের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—“অবস্থান নেই”। একজন অলরাউন্ডারের পক্ষে এর চেয়ে হতাশাজনক বার্তা আর কী হতে পারে?

জাতীয় দলের দরজা যখন এইভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন একজন খেলোয়াড়ের সামনে বেছে নেওয়ার মতো পথ খুবই সীমিত হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেই ক্যারিয়ার শেষ করার চিন্তা মাথায় আসা অস্বাভাবিক নয়। সোহান যেমন বলেছেন, “স্বপ্নটা না থাকলে ক্রিকেট ছেড়ে দিতাম”—মোসাদ্দেকের ক্ষেত্রেও এখন বাস্তবতা খুব কাছাকাছি।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে বারবার দেখা যাচ্ছে, ঘরোয়া পারফর্ম্যান্সের কোনো মূল্য নেই নির্বাচকদের কাছে। ‘ফেভারিটিজম’ আর ‘প্রোফাইল দ্বন্দ্ব’ যেন ক্রিকেটারদের স্বপ্ন গিলে খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মোসাদ্দেকের সম্ভাব্য অবসর ঘোষণা যেন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

তিন বছর ধরে জাতীয় দল থেকে দূরে থাকা এই অলরাউন্ডারের চোখে এখন স্বপ্ন নয়, শুধু শূন্যতা। দীর্ঘদিনের ঘাম-রক্ত-পরিশ্রমের ফল যখন মুখের ওপর “না” হয়ে আসে, তখন সেটা শুধু ‘বাধা’ নয়, হয়ে ওঠে ‘শেষ প্রহর’।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং নির্বাচকদের সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এমন পারফর্মারদের ন্যায্যতা নিশ্চিত করা, নাকি ভবিষ্যতের অনেক প্রতিভাবান মোসাদ্দেকরা হারিয়ে যাবে এই অন্ধকারে!

কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি