close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

মোবাইল ফোন আসক্তি: আধুনিক জীবনের ছায়া ব্যাধি

Alamin hosen suvo avatar   
Alamin hosen suvo
মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে বিপর্যয় ডেকে আনছে।..

### ভূমিকা

 

প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে মোবাইল ফোন আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। তথ্য ও যোগাযোগের এই মাধ্যমটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক সুবিধা প্রদান করলেও, এর অতিরিক্ত ব্যবহার এখন এক নীরব ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মোবাইল আসক্তি শুধু সময়ের অপচয়ই নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

 

### মোবাইল আসক্তির লক্ষণ

 

মোবাইল আসক্তির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

 

1. প্রয়োজন ছাড়াই বারবার মোবাইল চেক করা।

 

2. দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা।

 

3. সামাজিক অনুষ্ঠান বা পরিবারের মাঝে থেকেও মোবাইলে মনোনিবেশ করা।

 

4. ঘুমের সময় মোবাইল ব্যবহার করা, ফলে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া।

 

5. মোবাইল না থাকলে অস্থিরতা বা মেজাজ খারাপ হওয়া।

 

### শরীরিক কুফল

 

মোবাইল আসক্তির কারণে বিভিন্ন শরীরিক সমস্যার উদ্ভব হয়।

 

#### চোখের সমস্যা

 

মোবাইল স্ক্রিনের নীল আলো চোখের ক্ষতি করে, ফলে চোখে ব্যথা, ঝাপসা দেখা এবং ড্রাই আই সিনড্রোম হতে পারে।

 

#### ঘুমের ব্যাঘাত

 

রাতে মোবাইল ব্যবহারের ফলে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ ব্যাহত হয়, যা ঘুমের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

#### ঘাড় ও পিঠের ব্যথা

 

দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারের ফলে ‘টেক্সট নেক’ সমস্যা দেখা দেয়।

 

#### আঙুল ও কবজির ব্যথা

 

নিরবিচারে টাইপিং ও স্ক্রল করার ফলে কারপাল টানেল সিনড্রোম হতে পারে।

 

### মানসিক কুফল

 

মোবাইল আসক্তির মানসিক প্রভাবও ব্যাপক।

 

#### বিষণ্নতা ও উদ্বেগ

 

সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারে নিজের জীবনকে অন্যদের সাথে তুলনা করে হতাশায় ভোগা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

#### মনোযোগ কমে যাওয়া

 

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেয়।

 

#### নিঃসঙ্গতা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

 

বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, আত্মীয়-বন্ধুদের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ে।

 

### সমাজে প্রভাব

 

মোবাইল আসক্তির নেতিবাচক প্রভাব সমাজেও প্রতিফলিত হয়।

 

- শিশু-কিশোরদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা দেয়।

 

- পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়।

 

- শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগহীনতা ও ফলাফলে পতন ঘটে।

 

- কর্মজীবনে উৎপাদনশীলতার ঘাটতি দেখা দেয়।

 

### বিশেষজ্ঞদের মতামত

 

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামীমা আফরোজ বলেন, “মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার এক ধরণের ‘ডিজিটাল অ্যাডিকশন’। এর জন্য প্রয়োজন পরিবারের দৃষ্টি, সচেতনতা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা।”

 

### সমাধান ও করণীয়

 

মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে কিছু করণীয় পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

 

- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মোবাইল ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা আরোপ করা।

 

- শোবার ঘরে মোবাইল নিষিদ্ধ করা।

 

- অফলাইন শখ যেমন বই পড়া, হাঁটা, চিত্রাঙ্কন গড়ে তোলা।

 

- পরিবারের সাথে সময় কাটানো।

 

- শিশুদের হাতে অল্প বয়সে মোবাইল না দেওয়া।

 

### উপসংহার

 

মোবাইল প্রযুক্তি আমাদের জীবনে অসীম সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে, কিন্তু এর সঠিক ব্যবহারে সচেতন না হলে তা আমাদের জীবন থেকে শান্তি, সুস্থতা ও সম্পর্ক ছিনিয়ে নিতে পারে। তাই প্রযুক্তির সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে আমাদের বাঁচতে শিখতে হবে—তবেই ভবিষ্যৎ হবে আলোকিত ও সুস্থ।

 

### প্রস্তুত করেছেন:

 

মোঃ আল আমিন

 

স্টাফ রিপোর্টার / 

Walang nakitang komento