close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

মণিপুর আবার রক্তাক্ত: কুকি গ্রামপ্রধানকে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা, উত্তাল দুই জাতিগোষ্ঠী!..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মণিপুরে আবারও জ্বলছে জাতিগত সংঘাতের আগুন। জমি বিরোধের জেরে পুলিশের কথিত ক্রসফায়ারে নিহত কুকি গ্রামপ্রধান হৈখোলহিং হাওকিপ। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তাল পুরো রাজ্য, ফের ছড়িয়ে পড়ছে সহিংসতা। চলছ..

ভারতের উত্তপ্ত রাজ্য মণিপুর যেন আর কখনও শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না। দক্ষিণ মণিপুরের চূড়াচাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত লাংচিয়াংমানবি গ্রামে আবার ছড়িয়ে পড়েছে জাতিগত সংঘাত। জমি বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে এবার রক্ত ঝরলো আরও একবার। পুলিশের কথিত ‘ক্রসফায়ারে’ প্রাণ হারিয়েছেন কুকি সম্প্রদায়ের একজন প্রভাবশালী নেত্রী হৈখোলহিং হাওকিপ। এই মৃত্যুকে ঘিরে আবার উত্তাল হয়ে উঠেছে কুকি-মেইতেই সংঘাত।

মণিপুর পুলিশের দাবি অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গুলি চালানো হলে পাল্টা গুলি চালাতে বাধ্য হয় তারা। সেই গোলাগুলিতে হাওকিপ নিহত হন। কিন্তু এখানেই শুরু হয় বিতর্ক।

আদিবাসী সংগঠন ইন্ডিজিনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরাম (ITLF) জানিয়েছে, হাওকিপ কোনো গ্রামপ্রধানের স্ত্রী ছিলেন না, বরং তিনি নিজেই লাংচিয়াংমানবি গ্রামের প্রধান নেত্রী ছিলেন। তাদের ভাষায়, হাওকিপের একমাত্র অপরাধ ছিল তিনি কুকি-জো সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হওয়া। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই চূড়াচাঁদপুর জেলায় ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

আইটিএলএফ এই হত্যাকাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং এটি একটি “রাষ্ট্রীয় জাতিগত নির্মূল কৌশল” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, কুকিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটছে এবং তাতে সরাসরি রাজ্য সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী জড়িত।
এতটাই বিস্ফোরক এই দাবি, যে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মণিপুরের ভৌগোলিক বাস্তবতায় কুকি-জো ও মেইতেই সম্প্রদায় পাশাপাশি বসবাস করে। ফলে চাষের জমি বা আবাসন এলাকা নিয়েও দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছে। জমির সীমানা ঘিরে তীব্র সংঘর্ষের আশঙ্কায় আগে থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে ‘বাফার জোন’ তৈরি করা হয়। যদিও এই ‘নিরপেক্ষ অঞ্চল’ এখন পরিণত হয়েছে সহিংসতার নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পর জমি নিয়ে সহিংসতা অনেকটা কমে গেলেও, গত এক সপ্তাহে ফুবালা গ্রামে দুইবার সংঘর্ষ হয়েছে কৃষকদের মধ্যে। সর্বশেষ ঘটনায় একজন নিহত হওয়ায় উত্তেজনা আরও বাড়ে।

গতকাল শুক্রবার, ফুবালা গ্রামের চাষি নিংথৌজাম বীরেন সিং মাঠে কাজ করার সময় অজ্ঞাত সশস্ত্র দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন। তাকে ইম্ফলের মেডিকেল ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে এবং তিনি আশঙ্কামুক্ত।

এই ঘটনার পর পুলিশ লাংচিয়াংমানবি, হেইচাংলোক এবং ফুবালা অঞ্চলে অভিযান চালায়। পুলিশের ভাষ্য, তখনই তাদের ওপর আবার গুলি চালানো হয়। এই প্রতিক্রিয়ায় চালানো গুলিতেই প্রাণ হারান হৈখোলহিং হাওকিপ। তাঁর মরদেহ নেওয়া হয়েছে চূড়াচাঁদপুর জেলা হাসপাতালে। কুকি অধ্যুষিত এলাকায় তার মরদেহ পৌঁছনোর পর বিক্ষোভ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঞ্চলে।

এদিকে কেবল কুকি পক্ষ নয়, মেইতেই সম্প্রদায়ও একই রকম অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, কুকিরাই প্রথমে ‘বাফার জোনে’ সশস্ত্র হামলা চালায় এবং এই হামলার বিষয়ে সরকার অবগত থাকলেও নিরাপত্তা বাহিনী কার্যত নীরব।

এর জেরে মেইতেইদের পক্ষ থেকেও আজ শুক্রবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তারা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রেখেছে, যার ফলে ইম্ফল ও চূড়াচাঁদপুরের যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে। দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থান রাজ্যের পরিস্থিতিকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।

২০২৩ সালের মে মাস থেকে শুরু হওয়া এই জাতিগত সহিংসতায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫০ জনের বেশি মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি নাগরিক। নিরাপত্তা পরিস্থিতি এতটাই নাজুক, যে প্রতিটি মৃত্যু-সংবাদ যেন একটি নতুন বিস্ফোরণ।

রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ভয় ও অনিশ্চয়তা। সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, বাজারে অচলাবস্থা, স্বাভাবিক জীবন থমকে গেছে এই উত্তপ্ত রাজ্যে।

মণিপুর যেন ক্রমেই রক্তাক্ত অতীতের পথে হাঁটছে। কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মধ্যকার এই দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধান ছাড়া রাজ্যজুড়ে শান্তি সম্ভব নয়।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়— সরকার কি সত্যিই নিরপেক্ষ?
আর সাধারণ মানুষের রক্ত আর কতবার বইবে রাজনৈতিক স্বার্থ ও জাতিগত বিভেদের বলি হয়ে?

Keine Kommentare gefunden


News Card Generator