মিয়ানমারে আবারও ভয়াল ভূমিকম্প—দফায় দফায় কাঁপছে পুরো দেশ, আতঙ্কে কোটি মানুষ খোলা আকাশের নিচে..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারে আবারও নতুন কম্পন। টানা আফটারশকের মাঝে রোববার সকালেও অনুভূত হলো ৫.৫ মাত্রার কম্পন। প্রাণহানির আশঙ্কা, আতঙ্কে খোলা মাঠে আশ্রয় নিয়েছে লাখো মানুষ।..

ভূমিকম্পের দফায় দফায় কম্পনে আবারও কাঁপছে মিয়ানমার। দেশের জনগণ এখনও মার্চের ভয়াবহ কম্পনের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি, এরই মধ্যে রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে নতুন করে আরও একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ইউরোপীয় ভূমধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্র জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। উৎপত্তিস্থল ছিল মেইকটিলা থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে এবং মান্দালয়ের দক্ষিণে প্রায় ৯২ কিলোমিটার এলাকায়। কম্পনের গভীরতা ছিল ৩৫ কিলোমিটার (প্রায় ২১.৭৫ মাইল)।

দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন, অনেকে খোলা মাঠে বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। পুরনো ভবন ও অবকাঠামো নিয়ে চলছে আতঙ্ক, যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে আশঙ্কা। উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে পুরোদমে, তবে প্রতিনিয়ত আফটারশক ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি করছে।

এই ভূমিকম্পের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত চিত্র এখনো স্পষ্ট নয়। ইউরোপীয় সংস্থা জানিয়েছে, তাদের তথ্য প্রাথমিক এবং মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (USGS)-এর সঙ্গে যৌথভাবে আরও বিশ্লেষণ চলছে। কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে।

উল্লেখ্য, এর মাত্র দুই দিন আগে, অর্থাৎ ১১ এপ্রিল সকাল ৮টা ২ মিনিটে স্থানীয় সময় মিয়ানমারে আরেকটি কম্পন আঘাত হানে। সেটি ছিল ৪ দশমিক ১ মাত্রার এবং উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। বারবার কম্পনের কারণে লোকজনের মধ্যে ভয়, দুশ্চিন্তা এবং বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল ২৮ মার্চ। ওইদিন দুপুরে দেশটির উত্তরাঞ্চলে দুইটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭.৭ এবং ৬.৪। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মান্দালয় শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে। সেই ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিল অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ এবং আহত হয়েছিল আরও কয়েক হাজার। বহু স্থাপনা ভেঙে পড়ে, সড়ক ও সেতুর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এই কম্পনের প্রভাব পড়েছে মিয়ানমারের বাইরেও। থাইল্যান্ড, ভারত, দক্ষিণ-পশ্চিম চীন, বাংলাদেশ, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামেও অনুভূত হয় ভূমিকম্পের কম্পন। এসব দেশের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলিও সতর্কতা জারি করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার এখন ভয়াবহ ভূমিকম্প প্রবণতায় পড়েছে। আফটারশক সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে আরও কয়েক সপ্তাহ। এ অবস্থায় জরুরি সহায়তা, পুনর্বাসন এবং মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে দেশের লাখো মানুষের জন্য।

সরকার, সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো মিলে উদ্ধার ও পুনর্বাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সীমিত সংস্থান এবং টানা কম্পনের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকেই বিদেশি সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন।

No se encontraron comentarios