close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

মেট্রোরেলে আরও সহজ হচ্ছে টিকিট কাটা ও ভাড়া পরিশোধ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ব্যাংক কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মেট্রোরেলে ভাড়া পরিশোধের ব্যবস্থা আনছে কর্তৃপক্ষ। নতুন ইউনিভার্সেল টিকেটিং সিস্টেমে মিলবে দ্রুত, সহজ ও স্মার্ট যাত্রার অভিজ্ঞতা।..

ঢাকার মেট্রোরেল যাত্রীদের জন্য আসছে স্বস্তির সুবাতাস। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার যাত্রীদের ভাড়া পরিশোধ আরও সহজ করতে ইউনিভার্সেল টিকেটিং সিস্টেম (UTS) চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এই নতুন পদ্ধতিতে যাত্রীরা আর সীমাবদ্ধ থাকবেন না এমআরটি বা একক যাত্রার কার্ডে; বরং ব্যবহার করতে পারবেন ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপও

নতুন এই ইউটিএস ব্যবস্থায় স্টেশনগুলোতে বসানো হবে বিশেষ যন্ত্র, যেখানে পাঞ্চ করে ব্যাংক কার্ড দিয়েই ভাড়া দেওয়া যাবে। পাশাপাশি, যাত্রীরা বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি একক যাত্রার টিকিট কিনতে পারবেন। টাকা পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীর মোবাইলে চলে আসবে একটি কিউআর কোড, যা স্ক্যান করে ট্রেনে উঠা ও নামার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, নতুন এই টিকিটিং সিস্টেম চালু করতে লাগবে প্রায় ছয় মাস। ইতোমধ্যে আহ্বান করা হয়েছে প্রাথমিক দরপত্র। ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। পরবর্তী ধাপে তাদের কাছ থেকে চাওয়া হবে কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ডিএমটিসিএল নিজে এই ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করছে না। বরং নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই সফটওয়্যার, যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। আর তারা টিকিট বিক্রি থেকে একটি কমিশন পাবে। কমিশনের হার এখনও নির্ধারিত হয়নি, তা নির্ভর করবে দরপ্রস্তাবের ওপর।

বর্তমানে ব্যবহৃত পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ক্লোজ লুপ’ সিস্টেম। এতে শুধুমাত্র জাপানের সনি কোম্পানির তৈরি কার্ডই কাজ করে, যার ফলে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড বা মোবাইল পেমেন্ট সিস্টেম কাজ করে না। এই সীমাবদ্ধতা কাটাতেই ইউটিএস চালুর উদ্যোগ।

বর্তমানে যাত্রীরা যদি একক কার্ড ব্যবহার করেন, তাহলে তা কিনে পাঞ্চ করে স্টেশনে প্রবেশ করতে হয় এবং শেষে নির্দিষ্ট স্থানে সেটি জমা দিতে হয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই টিকিট কেনা যাবে, কেবল কিউআর স্ক্যান করেই যাত্রা শেষ করা যাবে।

বর্তমানে মেট্রোরেলে যাতায়াতে ৫৫ শতাংশ যাত্রী ব্যবহার করেন এমআরটি বা র‍্যাপিড পাস, বাকি ৪৫ শতাংশ একক যাত্রার কার্ড। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এ দুটি কার্ডের তীব্র সংকট দেখা যাচ্ছে। অনেক যাত্রী কার্ড না পেয়ে যাতায়াতে সমস্যায় পড়েছেন। এমনকি কার্ড থাকলেও টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়।

ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেন,যাত্রীর চাহিদা মতো কার্ড বা টিকিট সরবরাহ করা আমাদের দায়িত্ব। ভাড়া পরিশোধ যত সহজ হবে, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য তত বাড়বে।

ভারত, সিঙ্গাপুর, হংকংসহ অনেক দেশেই এই আধুনিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বাংলাদেশেও এটি চালু হলে মেট্রোরেলের যাত্রীদের জন্য তা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হবে।

শুরুতে নিপ্পন সিগন্যাল কোম্পানি সরবরাহ করেছিল প্রায় ৭ লাখ ২৮ হাজার এমআরটি কার্ড৩ লাখ ১৩ হাজার একক কার্ড। কিন্তু মেট্রোরেলের সম্প্রসারণের পর, এই কার্ডগুলো দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এরপর সরকারিভাবে আর নতুন এমআরটি কার্ড কেনা হয়নি। পরিবর্তে র‍্যাপিড পাস সরবরাহ করছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)

কিন্তু তারা চাহিদা অনুযায়ী কার্ড সরবরাহ করতে না পারায় তৈরি হয় কার্ড সংকট ও যাত্রী ভোগান্তি। অনেক কার্ড আবার যাত্রীদের হাতে থেকেই নষ্ট বা বিকল হয়ে পড়েছে। আবার কিছু যাত্রী কার্ড জমা না দিয়ে নিজের কাছে রেখেছেন।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে নতুন করে চার লাখ একক যাত্রার কার্ড কেনার উদ্যোগ নেয় ডিএমটিসিএল। এর মধ্যে দুই লাখ ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে। তবে সবার জন্য পর্যাপ্ত কার্ড নিশ্চিত করতে না পারার বাস্তবতায় ইউটিএস ব্যবস্থা হয়ে উঠছে সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞ সামছুল হক বলেন,মানুষ কার্ড চাইছে, অথচ কর্তৃপক্ষ তা দিতে পারছে না—এটা খুব বাজে দৃষ্টান্ত। নতুন ব্যবস্থা চালু হলে যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে।

মেট্রোরেলে যাতায়াত এখন আরও সহজ, স্মার্ট ও স্বস্তিদায়ক হতে যাচ্ছে। নতুন ইউটিএস ব্যবস্থা চালু হলে শুধু কার্ড সংকটই দূর হবে না, বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এটি এক বিশাল পদক্ষেপ হয়ে উঠবে।

ভবিষ্যতের যাত্রী সেবার এই রূপান্তর শুধু সময়ের দাবি নয়, বরং নগর যাতায়াতে প্রযুক্তির গতি এনে দেবে নতুন মাত্রা

لم يتم العثور على تعليقات


News Card Generator