মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হয়ে মনপুরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড়ের শক্তিশালী প্রভাবে মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপরে উঠে ভয়াবহ জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে ভোলার মনপুরার বিস্তীর্ণ এলাকা, পানিবন্দি ৩ হাজারের বেশি মানুষ। বহু গবাদিপশু নিখোঁজ, প্রশাসনের পক্ষ থ..

ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভয়াবহ জোয়ার দেখা দিয়েছে। মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে ব্যাপক দুর্যোগ সৃষ্টি করেছে। এতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল, আর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৩ হাজার মানুষ।

বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টার দিকে মেঘনার পানি হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করে। ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় মনপুরার চরকলাতলী, চরনিজাম, দাসেরহাট, চরমরিয়ম, সোনারচর, চরযতিনসহ আরও বেশ কিছু গ্রাম। এসব অঞ্চলে শত শত ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে চলে গেছে।


 বিচ্ছিন্ন জনপদে দুর্ভোগ চরমে

উপজেলার চরকলাতলী ও চরনিজাম এমনিতেই বেড়িবাঁধহীন এলাকা। সেখানে পানি ঢুকে পড়ার পর স্থানীয়দের রক্ষা করার মতো কোনো অবকাঠামো ছিল না। ফলে রাতারাতি অসংখ্য মানুষ ঘরছাড়া হয়ে পড়ে। অনেকে কোনো রকমে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বণিক জানান, জোয়ারের পানি ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত উঠে আসে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হয়েছে। চরকলাতলীতে পানির তোড়ে কয়েকটি গরু ও ছাগল মারা গেছে, যা স্থানীয়দের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


 সরেজমিন পরিস্থিতি ভয়াবহ

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে টানা দমকা হাওয়া ও ভারিবর্ষণ। একাধিক ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি উপকূলজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজিরহাট ইউনিয়নের দাসেরহাট, চরমরিয়ম, সোনারচর ও চরযতিন, এবং ১নং মনপুরা ইউনিয়নের লঞ্চঘাট, আন্দিরপাড় ও কাউয়ারটেক এলাকার নিচু অঞ্চল সম্পূর্ণ প্লাবিত। পানির উচ্চতা কিছু কিছু জায়গায় কোমর থেকে গলা পর্যন্ত পৌঁছেছে।


পানির উৎস: মেঘনার অস্বাভাবিক আচরণ

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর পানি বৃহস্পতিবার বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। এটি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, যা মূলত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সমুদ্র ও নদীর সংযোগস্থলে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, এই পানি দীর্ঘক্ষণ থাকলে আরও অনেক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলের বসতঘর, গবাদিপশু ও কৃষি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।


 প্রশাসনের তৎপরতা ও সহায়তা কার্যক্রম

ইউএনও লিখন বণিক বলেন, “আমরা দুর্গত এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছি। শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্রও খুলে দেওয়া হবে।”

এছাড়া তিনি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন কেউ পানিবন্দি অবস্থায় না থাকে এবং সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়।


প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ এখনো চলছে

মনপুরার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই জনজীবনে বিপর্যয়। একদিকে নদীভাঙন, অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ও অস্বাভাবিক জোয়ার — প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় এই জনপদের মানুষদের।

বর্তমানে যা অবস্থা, তাতে করে প্রয়োজন দ্রুত কার্যকর সহায়তা, পর্যাপ্ত ত্রাণ, এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা – নইলে সামনের দিনে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়।

Geen reacties gevonden