মেয়াদ শেষ, ইশরাকের শপথ নেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই: উপদেষ্টা আসিফ..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নেয়া এখন আর সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিলেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। মেয়াদোত্তীর্ণ গেজেট, আইনি জটিলতা এবং আন্দোলনের কারণে..

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনের শপথ নেওয়ার সব আইনি সুযোগ শেষ হয়ে গেছে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশনের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন যে গেজেট প্রকাশ করেছে, তার শপথ গ্রহণের মেয়াদও আইনগতভাবে শেষ। ফলে এখন আর ইশরাক হোসেনের পক্ষে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করার কোনো আইনগত সুযোগ নেই।

উপদেষ্টা আসিফ আরও বলেন, “ইশরাক হোসেন ও তার অনুসারীরা যে ধরনের আন্দোলন করছেন, তা নাগরিক সেবায় চরম ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪৫ শতাংশ সেবামূলক কাজ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এমন চলতে থাকলে নাগরিক সেবার পুরো কাঠামো ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘গণবিরোধী’ উল্লেখ করে দাবি করেন, “একজন ব্যক্তি রাজনীতির নামে একটি সিটির নাগরিকদের জিম্মি করতে পারেন না। এটি আইনভঙ্গ, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, এটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেশ ও নগরের স্বার্থবিরোধী। আমরা চাই না, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ুক।

এ সময় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা আশা করি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বিষয়ে ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেবেন। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক সৌহার্দ্য তৈরির জন্য কিছু আলোচনার ভিত্তি তৈরি হয়েছে। এই সংকট নিরসনে বিএনপির হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

তিনি ইঙ্গিত করেন, সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সম্পর্কের সেতুবন্ধন টিকিয়ে রাখতে আগ্রহ থাকলেও ইশরাকের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংঘর্ষপূর্ণ পরিস্থিতি সেই প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চলতি বছরের ২৭ মার্চ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ফলাফল বাতিল করে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। আদালত রায়ে বলেন, ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে গেজেট প্রকাশ করতে হবে।

নির্বাচন কমিশন আদালতের আদেশ অনুযায়ী ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে। এরপর থেকেই শপথ নিতে তৎপর হন ইশরাক হোসেন। কিন্তু সময়ক্ষেপণ, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা এবং রাজনৈতিক অনাগ্রহের কারণে শপথ অনুষ্ঠানটি আর বাস্তবায়ন হয়নি।

এখন সরকার বলছে, গেজেট অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই।

বিএনপি সমর্থিত এই তরুণ নেতার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন আদালতের রায়ে উঁকি দিলেও শপথ গ্রহণের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত থমকে যেতে হচ্ছে আইনি বাধার মুখে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার বক্তব্য স্পষ্ট—এই অধ্যায়ের ইতি ঘটেছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি কী পদক্ষেপ নেয়, আর ইশরাক হোসেন কীভাবে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখেন।

Nema komentara