close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

মে দিবস ২০২৫: শ্রমের নীরব কণ্ঠস্বর, মর্যাদার পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশা..

Jahid sumon Crime Correspondent avatar   
Jahid sumon Crime Correspondent
শ্রমনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে খাতভিত্তিক সংস্কার এবং তদারকি জোরদার করা জরুরি।..

প্রতিবছর মে মাসের প্রথম দিনটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে। বাংলাদেশেও দিনটি সরকারি ছুটি এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালন করা হলেও, শ্রমজীবী মানুষের বাস্তব চিত্রে নানা প্রশ্ন থেকে যায়।

 

গার্মেন্টস কারখানা থেকে শুরু করে নির্মাণশ্রম, শহুরে রাইডশেয়ারিং থেকে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং—শ্রমের রূপ বদলেছে, কিন্তু অধিকার ও সুরক্ষার প্রশ্ন আজও প্রায় একই জায়গায় দাঁড়িয়ে।

১৮৮৬ সালের শিকাগো শহরে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে দিনটির সূচনা, সেটি কালের পরিক্রমায় শ্রমিকদের অধিকারের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। অথচ এই প্রতীক কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে—সে প্রশ্ন আজকের বাংলাদেশেও প্রাসঙ্গিক।

 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রধান ভূমিকা পালন করলেও এখানকার শ্রমিকদের অনেকেই এখনও নিম্ন মজুরি, সীমিত ছুটি ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশের মধ্যে দিনযাপন করেন।

 

গাজীপুরের একটি কারখানায় কর্মরত একজন নারী শ্রমিক বলেন, "মে দিবস আসলে আমরা শুনি, কিছু প্রোগ্রাম হয়, কিন্তু আমাদের জন্য বাস্তবে কিছুই বদলায় না।"

 

শ্রমনীতি পর্যবেক্ষকদের মতে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হলে খাতভিত্তিক সংস্কার এবং তদারকি জোরদার করা জরুরি।

 

নগরায়নের জোয়ারে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে নতুন ভবন, সেতু ও অবকাঠামো। কিন্তু এসব নির্মাণকাজের পেছনে যাঁরা দিনরাত ঘাম ঝরাচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই কাজ করছেন অনিরাপদ পরিবেশে, স্বাস্থ্যসেবা ও দুর্ঘটনা-পরবর্তী সহায়তা ছাড়াই।

 

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই খাতে দুর্ঘটনার হার তুলনামূলক বেশি হলেও, এর প্রতিকারে কর্মপরিকল্পনা এখনও অপর্যাপ্ত।

 

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম-নির্ভর রাইডশেয়ার ও ফুড ডেলিভারি খাত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত প্রসার লাভ করেছে। কিন্তু এই খাতের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা প্রথাগত শ্রম আইনের বাইরে থাকায় অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের সুরক্ষা ও সুবিধা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

 

একজন ডেলিভারি কর্মী জানান, "ভবিষ্যতের কোনো গ্যারান্টি নেই, আজ যদি অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আর বিকল্প থাকে না।"

 

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন সময়োপযোগী হয়ে উঠেছে।

 

অনলাইনভিত্তিক কাজের জগতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হলেও, এখানকার ফ্রিল্যান্সাররা এখনও শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি পান না। ফলস্বরূপ, তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা, ব্যাংকিং সুবিধা কিংবা দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক নিরাপত্তা গড়ে ওঠেনি।

 

ফ্রিল্যান্সার তানিয়া রহমান জানান, "বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাজ করি, কিন্তু দেশে কোনও স্বীকৃতি বা সুবিধা পাই না—এমনটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে।"

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শ্রমের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে আইনি কাঠামো হালনাগাদ, পরিবেশগত নিরাপত্তা জোরদার এবং শ্রমজীবী মানুষের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

 

অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রমনীতি, কার্যকর তদারকি, এবং শ্রমিক-কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ছাড়া শুধু আনুষ্ঠানিকতা দিয়ে এই খাতের দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়।

 

মে দিবসের তাৎপর্য প্রতিটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনে বাস্তবতা হয়ে উঠুক—এটি শুধু একটি কামনা নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। আজকের বাংলাদেশ, যে উন্নয়নের পথে নিরন্তর অগ্রসর, তার ভিত্তিতে যে মানুষগুলো ঘাম ও পরিশ্রম ঢেলেছেন, তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করেই সামনে এগোনোই হতে পারে সবচেয়ে বড় অর্জন।

No se encontraron comentarios