মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিক ধরতে নতুন করে জোরালো অভিযান শুরু করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতের শহর হিসেবে খ্যাত বুকিত বিন্তাং এলাকায় বড় ধরনের একটি অভিযান চালানো হয়, যেখানে বাংলাদেশিসহ মোট ৫০৬ জন অনিবন্ধিত শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। এই অভিযানে ধরা পড়েছেন ১৫৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
অভিযানটি পরিচালিত হয় রাজধানী কুয়ালালামপুরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জালান এম বি এলাকায়, যা সাধারণত ট্যুরিস্ট স্পট ও নাইটলাইফ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। অভিযানে অংশ নেয় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের ১৮৫ জন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা। তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে একযোগে অভিযান পরিচালনা করে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে।
ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতুক জাকারিয়া শাবান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “এই অভিযান ছিল পূর্ব থেকেই নির্ধারিত এবং দীর্ঘ নজরদারির ফল। আমরা শুধুমাত্র বুকিত বিন্তাং নয়, পুরো মালয়েশিয়াজুড়ে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবো। অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীরা আমাদের আইন ও অর্থনীতির জন্য হুমকি। তাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশের ১৫৫ জন ছাড়াও নেপালের ১৪২ জন, ইন্দোনেশিয়ার ১০৯ জন, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরাও রয়েছেন। এরা সবাই অনিবন্ধিতভাবে বিভিন্ন নির্মাণ, রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও নিরাপত্তা খাতে কাজ করছিলেন বলে জানা গেছে।
মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মোট ৩,৮৭০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এসব অভিযানে ৫২,৩১৮ জন অভিবাসীর কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২২,৪৮৬ জন অভিবাসীকে অনিবন্ধিত হওয়ার কারণে আটক করা হয়েছে।
শুধু অভিবাসী নয়, তাদের অবৈধভাবে কাজের সুযোগ করে দেওয়া মালিকেরাও আইনের আওতায় আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে দাতুক জাকারিয়া জানান, “আমরা কেবল অবৈধ শ্রমিক নয়, তাদের নিয়োগ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নজরদারির আওতায় আনছি। এ পর্যন্ত ৪৯১ জন নিয়োগকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা অবৈধ অভিবাসীদের নিয়োগ দিয়েছেন।”
বাংলাদেশি অভিবাসীদের উদ্বেগ:
এই ধরনের ঘটনার পর মালয়েশিয়ায় থাকা বৈধ এবং অনিবন্ধিত বাংলাদেশিদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে কর্মস্থলে যেতে সাহস করছেন না। অনেকে আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপত্তা ও দূতাবাসের সহায়তা চেয়ে পোস্ট করছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মালয়েশিয়া সরকারের এই ধরনের অভিযান চলমান থাকবে এবং আগামী দিনে আরও কঠোর পদক্ষেপ দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ ও পরিষেবা খাতে অবৈধভাবে কর্মরত অভিবাসীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
সতর্কতা ও পরামর্শ:
বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকেও অভিবাসীদের যথাযথ কাগজপত্র হালনাগাদ রাখতে এবং অবৈধভাবে কাজ না করার বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল। মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে অবস্থান ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে এখনই সংশ্লিষ্টদের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অভিবাসন বিশ্লেষকরা।