close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

মাগুরায় শিশু ধর্ষণক হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, তিনজন খালাস

সুভাষ মজুমদার avatar   
সুভাষ মজুমদার
আট বছরের শিশু আছিয়ার নৃশংস ধর্ষণ ও নির্যাতন করে হত্যার রায় ঘোষণা —

মাগুরার আলোচিত আট বছর বয়সী শিশু আছিয়া আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় রায় ঘোষণা করেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। শনিবার (১৭ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মামলার বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন।
মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখকে আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। তবে একই মামলার অন্য তিন আসামি—সজীব শেখ (শিশুটির বোনের স্বামী), তার ভাই রাতুল শেখ এবং তাদের মা রোকেয়া বেগম—কে খালাস দেওয়া হয়েছে।

মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হয় ১৩ এপ্রিল। এর ১০ দিন পর, ২৩ এপ্রিল আদালত চার্জ গঠন করেন এবং বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর মাত্র ১২ কার্যদিবসের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ, আসামিপরীক্ষা, যুক্তিতর্ক শেষ করে ১৭ মে রায় ঘোষণা করা হয়।

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে মোট ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। সবকিছু মিলিয়ে মামলাটি একটি দৃষ্টান্তমূলক দ্রুত বিচার কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর জানান, হিটু শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেই সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্ট, পারিপার্শ্বিক প্রমাণ এবং অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণে তার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।
তিনি আরও বলেন, “একটি নিষ্পাপ শিশুকে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তিই ছিল যৌক্তিক। এই রায় বাংলাদেশে এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

ঘটনা
২০২৫ সালের ৬ মার্চ, মাগুরা জেলার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বেড়াতে গিয়েছিল আট বছরের শিশু আছিয়া। তার বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এক ভয়াবহ ঘটনার শিকার হয় সে—ধর্ষণ ও পরে মৃত্যু।
পরিবারের বিশ্বাসের জায়গায়, যেখানে একটি শিশু স্বাভাবিক নিরাপত্তা পেতে পারে, ঠিক সেই পরিবেশেই ঘটে যায় চরম মানবতাবিরোধী ঘটনা। ঘটনার পরে আছিয়াকে মাগুরা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে ১৩ মার্চ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নিষ্পাপ শিশুটি।

আইনজীবী মহলএই হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর মাগুরাসহ সারা দেশে জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিশু অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল প্রতিবাদে সরব হয়। মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানান, “এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা একযোগে কাজ করেছি।

একক দায় স্বীকার জবানবন্দি
ঘটনার পরের দিন থেকেই পুলিশের তদন্ত শুরু হয়। মামলায় অভিযুক্ত হন চারজন: হিটু শেখ (শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর), সজীব শেখ (বোনজামাই), রাতুল শেখ (সজীবের ভাই), এবং রোকেয়া বেগম (তাদের মা)।
তবে পুলিশের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মূল আসামি হিটু শেখ ১৫ মার্চ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়, যেখানে সে জানায় যে, একাই সে এ ঘটনায় জড়িত ছিল। তার স্বীকারোক্তি, মেডিকেল অ্যাভিডেন্স, এবং অন্যান্য সাক্ষ্য-প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়।


দৃষ্টান্ত স্থাপন
আদালতের রায়ে হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং অপর তিনজনের খালাস সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে—নারী ও শিশুর প্রতি নির্যাতনের ঘটনায় রাষ্ট্র আইনি পথে কঠোর অবস্থান নিতে প্রস্তুত। এই রায় দেশব্যাপী এমন অপরাধের বিরুদ্ধে এক শক্ত বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Комментариев нет


News Card Generator