close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

মা'দ'কা'স'ক্ত সন্তানের নি'র্ম'ম পরিণতি! বন্দরে পিতা-মাতা ও ভাইদের বিরুদ্ধে শ্বা'স'রো'ধে হ'ত্যা'..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ঘটেছে রোমহর্ষক এক পারিবারিক ট্র্যাজেডি। মাদকাসক্ত সন্তান আজিমকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে তারই মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এলাকাজুড়ে চলছে চাঞ্চল্যের ঝড়।..

নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় ঘটে গেছে এক হৃদয়বিদারক পারিবারিক ট্র্যাজেডি। দীর্ঘদিনের পারিবারিক কলহ এবং মাদকাসক্তির যন্ত্রণার জেরে পুত্র আজিম (৩৮)–কে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই মা, পিতা ও দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। সোমবার (২ জুন) সকাল ৮টার দিকে উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘারমোড় এলাকার নাজিরাপট্রিতে ঘটে এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড।

নিহত আজিম ওই এলাকার মোহাম্মদ আলী মিয়ার ছেলে এবং দুই সন্তানের জনক ছিলেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আজিম ছিলেন একজন চিহ্নিত মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী। মাদক গ্রহণ এবং অবৈধ ব্যবসার অর্থ জোগাড় করতে তিনি প্রায়ই নিজের পরিবারকে মারধর ও নির্যাতন করতেন।

কলহ থেকে খুনের রক্তাক্ত পরিণতি

এলাকাবাসী জানান, আজিমের মাদকাসক্তির কারণে পরিবারে দীর্ঘদিন ধরে অশান্তি চলছিল। পরিবারের সদস্যরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন তার সীমাহীন অত্যাচারে। ঘটনার দিন সকালে পারিবারিক বিষয় নিয়ে আজিমের সঙ্গে তার পিতা মোহাম্মদ আলী এবং দুই ভাই দিদার ও আনোয়ারের তর্কাতর্কি শুরু হয়। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তিনজন মিলে ইট দিয়ে আঘাত এবং শ্বাসরোধ করে আজিমকে হত্যা করে।

পুলিশি অভিযান ও গ্রেপ্তার

হত্যার পর ঘটনাস্থলেই ছুটে যায় বন্দর থানা ও মদনগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ। তারা নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মা আনোয়ারা বেগমকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। তবে ঘটনার মূল অভিযুক্ত পিতা মোহাম্মদ আলী এবং দুই ছেলে দিদার ও আনোয়ার এখনো পলাতক।

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুল ইসলাম, পিপিএম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, “আমরা দ্রুত লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি। নিহতের স্ত্রী দিপা বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।”

এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর পুরো এলাকায় নেমে এসেছে আতঙ্ক ও বিষাদের ছায়া। অনেকেই বলছেন, আজিমের মৃত্যু যেমন মর্মান্তিক, তেমনি তার মাদকাসক্তি এবং পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে এলাকাবাসীর বিরক্তিও দীর্ঘদিনের। অনেকে এটিকে ‘আত্মরক্ষামূলক হত্যা’ বললেও আইনের চোখে এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইনজীবী ও সমাজ বিশ্লেষকদের মত

বিশিষ্ট আইনজীবী আবদুল মজিদ জানান, “মাদকাসক্ত সন্তান যতই নির্যাতন করুক না কেন, আইন নিজের হাতে নেওয়া একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ করা উচিত ছিল। তবে বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ।”

সমাজ বিশ্লেষকগণ বলছেন, “এই ঘটনা আমাদের সমাজের একটি গভীর ক্ষতের চিত্র তুলে ধরছে—মাদক, পারিবারিক কলহ ও সহিংসতার ভয়াবহ মিশেল।”

মাদকাসক্তির ভয়াল থাবা শুধু একজন ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, তা গ্রাস করে পুরো পরিবারকেও। আজিমের মৃত্যু এবং এর পেছনে নিজ পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে পড়া একটি নির্মম বাস্তবতা—যা আমাদের সমাজকে নতুন করে ভাবিয়ে তোলে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশি তদন্তের পর যেন প্রকৃত বিচার নিশ্চিত হয়—এটাই সকলের প্রত্যাশা।

No comments found