ল্যান্ডমাইনবিরোধী চুক্তি থেকে সরে আসছে ইউক্রেন

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ল্যান্ডমাইনবিরোধী চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াল ইউক্রেন। জেলেনস্কি সই করলেন ডিক্রি, চুক্তিতে যুক্ত হলো রাশিয়াবিরোধী নিষেধাজ্ঞা পরিকল্পনাও।..

বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনার মধ্যেই এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল ইউক্রেন। ল্যান্ডমাইনবিরোধী অটোয়া কনভেনশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এই ঘোষণা এমন সময় এলো, যখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নতুন মোড় নিচ্ছে এবং কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে চারপাশে।

ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রিতে সই করেছেন। প্রেসিডেন্টের সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নথিতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক একটি কনভেনশন ত্যাগ নয়, বরং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ল্যান্ডমাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির এক সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এটি ইউক্রেনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত হতে পারে, যার ফলে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রগতি আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ সিদ্ধান্তকে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা হিসেবে দেখছে, কারণ ল্যান্ডমাইন দীর্ঘদিন ধরে বেসামরিক মানুষের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবেই বিবেচিত।

জানা গেছে, ইউক্রেনের সংসদে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং জাতিসংঘকে চুক্তি ত্যাগের বিষয়েও জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের এই পদক্ষেপকে অনেকেই বলছেন “যুদ্ধের বাস্তবতায় নেয়া একটি বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত”।

এই চুক্তি থেকে সরে আসা মানে ইউক্রেন ভবিষ্যতে ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করতে পারবে এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তারা আর দায়বদ্ধ থাকবে না।

চুক্তি ত্যাগের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার ওপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন,রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাকে আরও বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়ার শক্তি ক্ষয় সম্ভব।

তিনি আরও জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা যদিও ১৮ দফার শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তবে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে এবং বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকেও আহ্বান জানাবে তেমনি করতে।

জেলেনস্কি এই অবস্থানকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। জি-সেভেন ও ইইউসহ পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্মিলিত নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।

এতে করে একটি নতুন কৌশলগত নিষেধাজ্ঞা জোট গঠনের পথ তৈরি হয়েছে, যা ভবিষ্যতে মস্কোর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও জোরদার করতে পারে।

এই সিদ্ধান্তের পর মানবাধিকার সংগঠনগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, ল্যান্ডমাইন ব্যবহারের ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে সংঘাতপ্রবণ এলাকায় যেখানে সাধারণ মানুষ, শিশু ও বৃদ্ধদের চলাফেরা সীমিত, সেখানে ল্যান্ডমাইনের ভয়াবহতা অকল্পনীয়।

বিশ্বরাজনীতিতে এই ঘোষণার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনের এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে একপ্রকার কৌশলগত প্রতিরোধ—এমনটাই বলছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

ল্যান্ডমাইনবিরোধী চুক্তি থেকে ইউক্রেনের সরে যাওয়া নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহসী পদক্ষেপ। এটি যুদ্ধের কৌশল ও কূটনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। আগামী দিনে এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ভর করবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া এবং রাশিয়ার পাল্টা পদক্ষেপের ওপর।

No se encontraron comentarios