ইব্রাহিম ওয়াহিদ, কুয়াকাটা প্রতিনিধি।
বঙ্গোপসাগরের বুকচিরে গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা ডুব চর যেন পর্যটন সম্ভাবনার আলো ছড়াচ্ছে গোটা পটুয়াখালী জেলা জুড়ে। চর বিজয় রয়েছে অতিথি পাখি আর লাল কাকড়ার বসবাস চারদিকে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি আকাশ জুড়ে অতিথি পাখি গাঙচিলের ঝাঁক উড়ছে পুরো চর জুড়ে। এমন দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সমুদ্র পথে ফাইভার বোট অথবা স্পিড বোট এর মাধ্যমে পূর্ব দক্ষিণ কোনে ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হবে চর বিজয়।
বছরের বর্ষা মৌসুমে চরটি পুরোপুরি পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং শীত মৌসুমের আগমনে সমুদ্রের পানি কমতে থাকার সাথে সাথে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে চরটি দেখা মিলে। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের কাছে এই চরে ভ্রমণ অনেকটা এ্যাডভাঞ্চার ট্যুরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। চর বিজয় বাংলাদেশর অধিভুক্ত বঙ্গোপসাগরের তট হতে বিচ্ছিন্ন একটি ছোট দ্বীপ। এর আয়োতন প্রায় ৫ হাজার একরের মত। স্থানীয় মানুষের এবং জেলের কাছে এই চরটি হাইরের চর নামে পরিচিত। চরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার।এখানে দাড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে পর্যটকরা। ২০১৭ সালে সরকারি ভাবে স্থানীয় জেলা প্রশাসক চরটির সরকারি মালিকানা ঘোষণা করেন পাশাপাশি চরটি রক্ষার ও উন্নয়নের কাজ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
স্থানীয় জেলেদের কাছে পরিচিত হাইরের চর নামে ২০১৭ সালে সমুদ্র ভ্রমণরত কয়েক জন পর্যটক ও সাথে থাকা গাইডদের নজরে চরটি পরলে তারা এই খানে নেমে পরেন। এবং পুরো চরটি তারা ঘুরে দেখেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পরলে বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,শিক্ষক এবং সমাজ সেবক সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিরা সবাই মিলে চরটি পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নেন। চরটি পরিদর্শন ও এর বিস্তারিত সম্পর্কে জানার পরে সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটির নাম করন করা হয় " চর বিজয় "।
চর বিজয় ভ্রমণে গেলে দেখা মিলবে লাল কাকড়ার গালিচা বিছানো দূর থেকে লাল কাকড়ার ঝাঁক দেখে মনে হয় পুরো চর লাল রংয়ে সাজানো হয়েছে।
এ যেন লাল কাকড়ার মিলন মেলা বসেছে পুরো চর জুড়ে। যে কারো কাছে মনে হবে এই চরটি লাল কাকড়ার রাজ্য। এখানে লাল কাকড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির ঝাঁক চোখে পড়বে একের পর এক অতিথি পাখি ঝাঁক এসে বসছে চরে এবং গায়ের রং সাদা বর্নের গাঙচিল পাখি গুলো উরছে আকাশ জুরে। এমন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা সকল পর্যটকদের আসতে হবে গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চর বিজয়।
চারদিকে বিশাল জলরাশি তার ভিতর এক টুকরো চর যেনো এক অতিথি পাখি ও লাল কাকড়ার রাজ্য এখানে নেই কোন কোলাহল একে অপরের সাথে কি সুন্দর প্রকৃতির মেলবন্ধন । অতিথি পাখি আর লাল কাকড়ার বিচরন দেখ মনে হবে পুরো চরের মালিকানা যেন লাল কাকড়া আর অতিথি পাখিদের। এখান থেকে তাকালে এই দ্বীপটির চার দিকে অসংখ্য জেলেদের মাছ শিকারের ছোট বড় নৌকা এবং ট্রলারের দেখা মিলবে। এই চরে অনেক সময় জেলেরা সারাদিন মাছ শিকার করে রাত্রে এখানে অবস্থান করেন আবার দিনেও কেউ কেউ বিশ্রামের জন্য আসেন।
জেলে সালাম চৌকিদার বলেন, এই চরে আমরা মাছ ধরি।এখানে অনেক মাছ পাওয়া যায়। এই চরে আগে টুরিস্ট আসতো না এখন অনেক টুরিস্ট এখানে ঘুরতে আসে। আমাদের নৌকা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যায়।অনেকে আবার আমাদের নৌকায় রান্না করেও খেতে চায়।আমরা তখন রান্না করে দেই।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটক রোকন রাইয়ান বলেন, চর বিজয় আমার কাছে এক দুর্দান্ত স্পট মনে হয়েছে। চারপাশে থৈথৈ পানি, মাঝখানে ছোট্ট এক দ্বীপ এর সৌন্দর্যের তুলনা হয় না। এখানকার বড় ভালো লাগার বিষয় হলো হাজার হাজার অতিথি পাখি। ঝাকে ঝাকে ঘোরাফেরা করছে। সাথে আছে অসংখ্য লাল কাকড়া। এমন অসাধারণ দৃশ্য আর কোথাও আমরা দেখিনি। আমরা ৮ জন পর্যটক ছিলাম, সবার অনুভূতি ছিল বেশ মজার। তবে এখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা আরো সহজলভ্য করতে হবে। ফাইভার বোট ও স্পিডবোটের ভাড়া যদি পর্যটকদের নাগালে রাখা যায় আমি মনে করি, হাজার হাজার পর্যটক শীত মৌসুমে সম্ভাবনাময় নতুন এ দ্বীপ ঘুরতে যাবেন।
ট্যুর অপারেটরস্ এসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা (টোয়াক)'র প্রেসিডেন্ট, রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, চর বিজয় আমাদের দেশের সম্পদ এই দ্বীপের চার পাশের সমুদ্রের বিশাল জলরাশি এখানে রয়েছে লাল কাকড়া এবং অতিথি পাখি যেগুলো পর্যটকদের কাছে সবথেকে বেশি আকর্ষনীয়। এখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের সরল-সৌন্দর্যে আনন্দিত হবে যে কোন পর্যটক। বিশাল আকৃতির এই চরের সাথে স্থানীয় জেলেদের জীবন জীবিকার একটি বড়ো অংশ মিশে আছে। কুয়াকাটা থেকে দক্ষিণ পূর্ব কোনে চরটির অবস্থান কুয়াকাটার যত গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে তার ভীতর চর বিজয় অন্যতম। একদিকে একজন পর্যটক সমুদ্র পথে নৌ-ভ্রমনের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে অন্য দিকে গভীর সমুদ্রে জেগে ওঠা চর এর মনোরম দৃশ্য দেখতে পাবে তার উপর প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য লাল কাকড়ার এবং অতিথি পাখির রাজ্যের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা তাদের মুগ্ধ করবে।
মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ বছরে চর বিজয় বনায়নের জন্য ঝাউগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়। গাছের চারা গুলো যদি বেঁচে থাকে তাহলে আমাদের বনবিভাগের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে আরো গাাছ লাগানো হবে । চরটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পার্যটকরা এখানে আসে। আমাদের বনবিভাগের পক্ষ থেকে পর্যটকদের কাছে অনুরোধ তারা যেন লাল কাকড়া অতিথি পাখি সহ এখানকার জীববৈচিত্র্যের কোন ক্ষতি না করে। বনবিভাগের পাশাপাশি তারাও যেন জীববৈচিত্র্য রক্ষা সচেতন হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার, মো.আবুল কালাম আজাদ বলেন, কুয়াকাটার অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান চর বিজয়। গভীর সমুদ্রের জেগে ওঠা চর এখানে রয়েছে লাল কাকড়ার আর অতিথি পাখির সৌন্দর্য যে কোনো পর্যটক এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ফাইভার বোট এবং স্পিড বোট এর মাধ্যমে এখানে যে সমস্ত পর্যটকরা ভ্রমণে যায় এবং যে সমস্ত বোট মালিক চালক রয়েছে তাদেরকে আমাদের ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা দেয়া আছে, প্রত্যেক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্য অবশ্যই প্রতিটি বোটে ধরন ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠানো এবং লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে, দক্ষ চালক,প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন চালিত তেল,মবিল, যন্ত্রপাতি বোটে রাখতে হবে যাতে করে চর বিজয় আসা জাওয়ার মাঝে কোন ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে না হয় পর্যটকদের।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মো. রবিউল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটার চর বিজয় পর্যটকদের কাছে একটি অন্যতম আর্কষনীয় দর্শনীয় স্থান এখানে সমুদ্র পথে নৌ- ভ্রমণের একটা বিশাল সুযোগ রয়েছে। এই চরের বিশেষ আর্কষন হাজার হাজার অতিথি পাখি এবং লাল কাকড়া যেগুলো লোকালয় সচারাচর দেখা মিলে না। বিশেষ করে শীত মৌসুমে প্রচুর পরিমানে অতিথি পাখি আসে এই চরে। এখানে যে সমস্ত পর্যটকরা ভ্রমণে আসে তাদের কথা চিন্তা করে উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে অস্থায়ী ২টি টয়লেট এবং একটি যাত্রী ছাউনি তৈরী করার পরিকল্পনা রয়েছে যাতে করে পর্যটকরা এটি ব্যবহার করতে পারে এবং যাত্রী ছাউনির নিচে বিশ্রাম নিতে পারে।



















