কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন রোগীর চাপ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। সকাল থেকেই চিকিৎসকদের কক্ষে লম্বা লাইন, টিকিট কাউন্টার থেকে ফার্মেসি—সব স্থানে উপচে পড়া ভিড়। বুধবার সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেড় লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা বর্তমানে ভর করে আছে এনজিওসহ মাত্র ৮ জন চিকিৎসকের ওপর। রোস্টার অনুযায়ী প্রতিদিন আউটডোরে রোগী দেখেন মাত্র ২–৩ জন চিকিৎসক। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেও দীর্ঘদিন ধরে জনবল সংকট রয়েছে। যদিও সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নার্স যোগ দিয়েছেন, কিন্তু তাদের সেবার মান নিয়ে রোগী ও স্বজনদের ক্ষোভ রয়েছে। অভিযোগ করছেন—বেশির ভাগ নার্স অদক্ষ, রুক্ষ আচরণ করেন এবং সঠিকভাবে ক্যানোলা পর্যন্ত দিতে পারেন না।
এদিকে বহির্বিভাগে রোগী দেখার সময় চিকিৎসকরা আরেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেক রোগীই রোগের বিবরণ না দিয়ে সরাসরি ওষুধের নাম—বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও গ্যাসট্রিকের ওষুধ—চেয়ে বসেন। ৮ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব পালনকারী এক চিকিৎসক জানান, “বেশিরভাগ রোগী প্রতিদিনই আসেন। চেহারা দেখে বোঝা যায় না, তবে নিয়মিত রোগীর সংখ্যা অনেক, বিশেষত নারী রোগী। উপসর্গ বলার বদলে অনেকে সরাসরি ওষুধের নাম বলেন।”
ফার্মেসির কর্মীরাও একই তথ্য দিয়েছেন। তাদের মতে, দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে এটি এখন নিয়মিত একটি চিত্র।
তবে রোগীরা চিকিৎসকদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, তারা দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অনেকেই বিরক্ত হয়ে অসম্পূর্ণ সেবা নিয়েই ফিরে যান। একজন ষাটোর্ধ্ব রোগী অভিযোগ করেন, হাসপাতালে ভিড়ের মধ্যে তার পকেট থেকে ৮০০ টাকা চুরি হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল হাসান বলেন, রোগীর চাপ সামাল দিতে বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই বেড সংকট দূর হবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. গোলাম মারুফ জানান, পুরোনো ভবনটি ৩০ শয্যার ছিল।সেটি দীর্ঘ দিন ধরে পরিত্যাক্ত। নতুন ভবনে বেড সংখ্যা ১৬ থেকে ২০। কিন্তু রোগীর চাপ এত বেশি যে ফ্লোরিং করেও রোগী ভর্তি দিতে হয়।
তার ভাষায়, “অনেক সময় রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার দুই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়।” রোগীদের নিরাপত্তা নিয়েও সঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
জনবল সংকট, বেডের স্বল্পতা, অব্যবস্থাপনা ও প্রতিদিন বাড়তে থাকা রোগীর চাপ—সব মিলিয়ে কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল ও নাজুক হয়ে উঠছে।



















