কুষ্টিয়ায় নতুন কৌশলে ব্যবসায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সিন্ডিকেট..

Badsha Alamgir avatar   
Badsha Alamgir
৫ আগস্টের পর ব্যবসার দেখভালে বিএনপি নেতারা

কুষ্টিয়া অঞ্চলে নতুন কৌশলে তামাক ব্যবসায় নেমেছেন আওয়ামীলীগ নেতাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তামাক ব্যবসার আড়ালে এই সিন্ডিকেট জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারখানা নির্মাণ করে তৈরী করছেন বিশ্বের নামিদামি ব্যান্ডের নকল সিগারেট। এ সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল চৌধুরী ও তার ব্যবসায়ীক পার্টনার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুস সবুর লিটন। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে গেছে নওফেল চৌধুরী ও আব্দুস সবুর লিটন। আত্মগোপনে থেকেও তারা নানা কৌশল টিকিয়ে রেখেছেন ব্যবসা। পরিবর্তন করেছেন কোম্পানির নাম। আওয়ামীলীগের পরিবর্তে অবৈধ ব্যবসার সেল্টার দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় কুষ্টিয়ার তিন উপজেলায় নওফেল চৌধুরী সিন্ডিকেটের নতুন কৌশলে একাধিক অফিস ও কারখানা চালু করেছেন। এমনকি তাদের কোম্পানিতে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি নামিদামি কোম্পানির নকল সিগারেট তৈরি ও নকল ব্যান্ডরোল লাগিয়ে বাজারে সরবরাহ করে আসছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন। তিনি ২৫ নং চট্টগ্রাম রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং রামপুর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও খালিশপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য। তার এই দুর্নীতির সারণী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অভিযোগ রয়েছে, বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর মাধ্যমে মন্ত্রী নওফেল ও প্যানেল মেয়র লিটন জুটি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লোপাত করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ৫ আগস্টের পর ঢাকায় তাদের একাধিক কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ এই রাজস্ব ফাঁকির প্রামাণ পাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক মন্ত্রী নওফেল ও সাবেক প্যানেল মেয়র লিটন পালিয়ে গেলেও কুষ্টিয়া অঞ্চলে থেকে নেই তাদের অবৈধ ব্যবসা। পরিবর্তিত পেক্ষাপটে বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় আবারো বেপরোয়া আওয়ামীপন্থী এই সিন্ডিকেট। রাতারাতি পরিবর্তন করা হয়েছে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর নাম। 'তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো' হয়ে গেছে 'জেনুইন ট্যোবাকো'। অফিসকারখানায় ঝুলানো হয়েছে নতুন নামের সাইন বোর্ড। তবে নতুন নামে কার্যক্রম শুরু হলেও একই অফিসে একই কর্মকর্তারা কর্মরত রয়েছেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকো কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তাকর্মচারীর সাথে কথা বলে এ সব তথ্য উঠে এসেছে। কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। তবে তারা বলেন, বর্তমানে কুষ্টিয়া অঞ্চলে জেনুইন লিফ টোব্যাকো কোম্পানির সবকিছু দেখভাল করেন তিনজন কর্মকর্তা। তারা হলেন, সিইও জাহিদ, জিএম বেলাল হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এ অঞ্চলে নওফেল সিন্ডিকেটের সকল কার্যক্রম পারিচালনা করছেন এই তিন কর্মকর্তা। কুষ্টিয়ার ত্রিমোহনী এলাকায় জেনুইন লিফ টোব্যাকোর অফিসে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, অফিসে কোন কর্মকর্তা নেই। নিরাপত্তাকর্মীসহ কয়েকজন কর্মচারী রয়েছেন। তারা জানান, বেশ কিছুদিন কোন স্যার অফিসে আসছেন না। এর বেশি কিছু তারা বলতে রাজি হয়নি। তবে সবার চোঁখেমুখে ছিল ভয় ও আতঙ্কের ছাপ। স্থানীয়

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ও চট্টগ্রামের সাবেক প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন

যুবক মিলনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভবনটি ভাড়া নিয়ে কয়েক বছর ধরে অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো নামে একটি তামার কোম্পানি। হঠাৎ ৫ আগস্টের পর আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর সাইন বোর্ড নামিয়ে জেনুইন লিফ টোব্যাকোর সাইন বোর্ড টাঙ্গানো হয়। ওই যুবক বলেন, নাম পরিবর্তন হলেও অফিসের আসবারপত্র পরিবর্তন করা হয়নি এবং যারা এখানে কর্মরত ছিলেন তারাই রয়েছেন। স্থানীয় আরো একাধিক ব্যক্তির সাথে বলা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের আগে কোম্পানির নাম ছিল তারা টোব্যাকো। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে কোম্পানির নাম ও হলেও কর্মকর্তা একই থাকেন। এই কোম্পানির পুরোনো কর্মকর্তা বেলাল হোসেন সবকিছু দেখভাল করেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলায় একাধিক গোপন কারখানায় নামিদামি ব্যান্ডের নকল সিগারেট তৈরি করছেন 'জেনুইন ট্যোবাকো'। দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের নাজিবপুর ও প্রতাপপুর এলাকায় এবং আড়িয়া ইউনিয়নের বড়গাংদিয়ার জহুরাগঞ্জ মাঠে মধ্যে নকল সিগারেট তৈরির কারখানা স্থাপন করেছেন সাবেক মন্ত্রী নওফেলর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক পার্টনার লিটন। উপজেলা বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় কারখানার মধ্যে অনেকটা প্রকাশ্যে তৈরী করা হচ্ছে নকল সিগারেট। বিএনপি নেতাদের হুমকিতে এসব বিষয়ে স্থানীয় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। কুষ্টিয়ার ভেড়াম- ারা উপজেলার ১২ মাইল নামকস্থানেও রয়েছে 'জেনুইন ট্যোবাকো' কোম্পানীর কারখানা। কুষ্টিয়া ত্রিমোহনী এলাকায় মনছুর ভবন ভাড়া নিয়ে তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর অফিস করা হয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের হঠাৎ ওই সাইন বোর্ড নামিয়ে 'জেনুইন ট্যোবাকোর' সাইন বোর্ড ঝুলানো হয়েছে। শহরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজসহ ৫টি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জেনুইন ট্যোবাকো কোম্পানি। বিদেশি বায়াদের রাখার নামে এখানে নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড চলছে। শহরের ছয় রাস্তার মোড়সহ একাধিক স্থানে আলিশান অফিস রয়েছে নকল সিগারেট সিন্ডিকেটের। এসব অফিসে রাজনৈতিক দলের নেতাসহ জেলার প্রভাবশালীদের গোপনে যাতায়াত রয়েছে। এসব অফিস থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনসহ সংশিষ্ট সকল সংস্থাকে। যার কারণে নির্বিঘ্নে বিশ্বের নামিদামি ব্যান্ডের সিগারেট তৈরী করে

বাজারজাত করছে চক্রটি। ৫ আগস্টের আগে একইভাবে আওয়ামীলীগ নেতাদের ম্যানেজ করে এই দুই কোম্পানি বিপুল পরিমান তামাক ক্রয় এবং গোল্ডলিফ ও বেনসনের মতো নামিদামি ব্যান্ডের সিগারেট তৈরি করেছে চক্রটি। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান হাবলু মোলা বলেন, তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর সাথে আমার কোন ব্যবসায়ীক সম্পর্ক নেই। তবে আমার জমিতে তারা ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার হাউজ নির্মাণ করে তামাক ক্রয় করেন। আমি নিজেও তাদের কাছে তামাক বিক্রয় করি। পরে মজুদকৃত তামাক তারা বিদেশে রপ্তানি করেন। তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর নাম পরিবর্তন করে কিছুদিন আগে জেনুইন ট্যোবাকো কোম্পানি নামকরণ করা হয়েছে বলেও স্বীকার করেন এই বিএনপি নেতা। অন্যদিকে তামাক ব্যবসার আড়ালে পলাতক আওয়ামীলীগ নেতা ও তাদের সম্পদ রক্ষায় মাঠে নেমেছেন নওফেললিটন সিন্ডিকেট। শক্তিশালী এ সিন্ডিকেটের হেফাজতে রয়েছে সাবেক এমপি ও মন্ত্রীদের একাধিক নামিদামি গাড়ি। গত ১০ জুন রাতে কুষ্টিয়া শহরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে সাফিনা টাওয়ারের গ্যারেজ থেকে ভারতে নিহত সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের কোটি টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ব্র্যান্ডের গাড়িটি উদ্ধার করে পুলিশ। ওই গ্যারেজটি ভাড়া নিয়েছিল আব্দুস সবুর লিটনের মালিকানাধীন জেনুইন লিফ কোম্পানি। টাওয়ারের মালিকের সাথে ভাড়ার চুক্তিপত্রে জেনুইন ট্যোবাকো কোম্পানি পক্ষে স্বাক্ষর করেন মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান খোকন। আনারের গাড়িটি মোস্তাফিজুর রহমানের ভাড়া করা পার্কিং স্পেসেই ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মোস্তাফিজুর রহমান গাংনী পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। গাড়িটি নওফেলের মাধ্যমে আব্দুস সবুর লিটনের মালিকানাধীন জেনুইন ট্যোবাকো কোম্পানির লোকজন এখানে নিয়ে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে কোম্পানির সিইও জাহিদ, জিএম বেলাল হোসেন ও নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। কর্মকর্তা সকলের মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তাদের অফিসে গিয়ে কেয়ারটেকার ও দারোয়ানকে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে জেনুইন লিফ টোব্যাকো কোম্পানীর পাবলিক রিলেশন অফিসার এ এম সালেহীন তৌহিদ বলেন, কোম্পানির বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। আমি নতুন যোগদান করেছি, কিছুই জানি না। স্যাররা কোথায় আছে তাও বলতে পারবো না। পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সামনের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আশিকুর রহমান বলেন, গত বছরের ১ জুলাই মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ভবনের তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তিনি তামাক কোম্পানিতে বড় পদে রয়েছেন। দৌলতপুরের বিএনপি নেতা ও তামাক ব্যবসায়ী আসাদুজ্জান আসাদ বলেন, আমি তারা কোম্পানির সাথে কোন ব্যবসা করি না। গত বছর করেছিলাম। কিন্তু লেনদেন ভালো না হওয়ায় এবার ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি। এ বছর বিএনপির অন্য নেতা তাদের সাথে ব্যবসা করছেন। কুষ্টিয়া পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, এ এধরণের কোন সিন্ডিকেটের সুনির্দিষ্ট তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। গাড়িটি কারা কিভাবে এখানে এনেছে সব কিছু মাথায় নিয়েই পুলিশ কাজ করছে।

Nenhum comentário encontrado


News Card Generator