close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

ক্ষমতায় গেলে আফগান মডেলে শরিয়া আইন চালুর ঘোষণা ফয়জুল করীমের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতা মুফতি ফয়জুল করীম ঘোষণা দিয়েছেন, তারা যদি নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারে, তবে বাংলাদেশে শরিয়া আইন চালু হবে আফগান মডেলে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের অধিকারও নিশ্চিত থাকবে ..

ক্ষমতায় এলে আফগান মডেলের শরিয়া আইন চালুর ঘোষণা দিলেন মুফতি ফয়জুল করীম

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। এরই মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন—তাদের দল যদি দেশের শাসনক্ষমতায় আসে, তাহলে বাংলাদেশে শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করা হবে। তাও আবার আফগানিস্তানের মডেলে।

এই ঘোষণা তিনি দিয়েছেন নিউইয়র্ক সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার (১ জুলাই) বেলা ১১টায় এবং বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামের একটি ইউটিউব ভিত্তিক টকশোতে অংশ নিয়ে। আলোচিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের জবাবে ফয়জুল করীম বলেন, “আমাদের শরিয়া, আমাদের দর্শন—সব কোরআন ও হাদিসে রয়েছে। তিনি আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিকে উদাহরণ হিসেবে টেনে বলেন, “সেখানে শরিয়া অনেক বেশি পালন হচ্ছে। এরপরই তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন—“হ্যাঁ, আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশ বানাতে চাই।

এই ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অনেকেই একে রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানের আরেকটি চিহ্ন হিসেবে দেখছেন। অপরদিকে, ফয়জুল করীমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তাঁর দল যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং শরিয়া প্রতিষ্ঠার নীতিগত অবস্থানে অটল রয়েছে, সেটিও স্পষ্ট হয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে শরিয়া আইনের আওতায় সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, “শরিয়া আইনে হিন্দুদেরও অধিকার থাকবে। আমরা কারও প্রতি জুলুম করব না। ইসলাম ন্যায়বিচার শেখায়।” তাঁর এই বক্তব্য একদিকে সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করলেও অন্যদিকে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—আফগান মডেলের মধ্যে প্রকৃতপক্ষে সংখ্যালঘুদের অধিকার কতটা নিরাপদ।

সম্প্রতি ঢাকায় ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর একাধিক নেতার উপস্থিতি দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার একপর্যায়ে ফয়জুল করীম বলেন, “কোনো একটি বিষয়ে ঐকমত্য হলে একই মঞ্চে আসা যায়।” তবে তিনি পরিষ্কার করেন, “আমি আমার পুরনো বক্তব্য থেকে একচুলও সরিনি।” উল্লেখ্য, পাঁচ বছর আগে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, “ইসলাম ধ্বংস করতে জামায়াতই যথেষ্ট।

এই দ্বৈত বার্তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। কেউ বলছেন, এটা নির্বাচনী সমঝোতার ইঙ্গিত। আবার কেউ বলছেন, ফয়জুল করীম এখনো জামায়াতকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন না।

মহাসমাবেশে বিএনপির অংশগ্রহণ না করা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ফয়জুল করীম বলেন, “যেসব দল রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে একমত, তাদেরই দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। বিএনপি এতে রাজি নয়, তাই তারা দাওয়াত পায়নি।

তিনি আরও বলেন, “বিএনপির চাঁদাবাজি, কোন্দল, মারামারি দেখে জনগণ ক্ষিপ্ত। আমি জনগণের মুখপাত্র হিসেবে তাদের সমালোচনা করছি।” তাঁর এই বক্তব্য বিএনপির রাজনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

টকশোর শেষদিকে দেশের বিভিন্ন মাজারে হামলার প্রসঙ্গ এলে ফয়জুল করীম বলেন, মাজার খারাপ নয়। কেউ যদি সেখানে সেজদা দেয়, তাকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। ভাঙচুর নয়। এই বক্তব্য তাঁর পক্ষ থেকে একটি তুলনামূলকভাবে নরম ও সহনশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছে।

মুফতি ফয়জুল করীমের এই বক্তব্য এবং ঘোষণাগুলো দেশের রাজনীতিতে নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। তিনি যেমন শরিয়া প্রতিষ্ঠার ঘোষণার মাধ্যমে কট্টর অবস্থানের বার্তা দিয়েছেন, তেমনি সংখ্যালঘু অধিকার ও মাজার ভাঙচুর প্রসঙ্গে তুলনামূলক নরম অবস্থান নিয়ে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টাও করেছেন। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাঁর এই অবস্থান ইসলামী আন্দোলনের কৌশলগত অবস্থান হিসেবে ব্যাপকভাবে বিশ্লেষণ হচ্ছে।

No comments found


News Card Generator