চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় ঘটে গেছে এক মধ্যযুগীয় বর্বরতার চিত্র। পুরনো প্রেমের টানে সাড়া দিয়ে যাওয়া এক যুবককে চোখ বেঁধে নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে প্রেমিকার পরিবারের হাতে। শুধু মারধরই নয়—চোখ, হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে তুলে ফেলা হয়েছে হাত ও পায়ের নখ! হৃদয়বিদারক এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো এলাকা।
নৃশংস এই ঘটনা ঘটে শনিবার (৫ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে, কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ফাজিল খাঁর হাট এলাকায় এক ভাড়া বাসায়। ভুক্তভোগী যুবকের নাম মো. আলমগীর (২৫), যিনি স্থানীয় বাসিন্দা এবং পেশায় একজন বাস চালক।
স্থানীয় সূত্র এবং আলমগীরের পরিবার জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এক গার্মেন্টসকর্মীর (২৩) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আলমগীরের। ছেলের পরিবার সম্পর্কটি মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার ছিল তীব্রভাবে বিরোধী। সম্পর্ক ভেঙে পড়ে, এবং আলমগীর পরবর্তীতে অন্যত্র বিয়ে করেন। কিন্তু পুরনো প্রেমের ধোঁয়া যেন কাটছিল না—বিয়ের পরেও সেই মেয়ের সঙ্গে মাঝে মাঝে যোগাযোগ ছিল বলে জানায় তার পরিবার।
এ যোগাযোগই যেন মৃত্যুর ফাঁদে পরিণত হয়। শুক্রবার রাতে মেয়েটির ফোন পেয়ে আলমগীর ছুটে যান তার ভাড়া বাসায়। কিন্তু সেখানে অপেক্ষা করছিল ভয়ঙ্কর ফাঁদ। বাসায় প্রবেশ করামাত্রই তাকে আটকে ফেলা হয়। পরদিন দুপুরে মেয়েটির মা, দুই ভাই, দুই বোন এবং দুই বোনের স্বামী মিলে চোখ ও হাত-পা গামছা দিয়ে বেঁধে চলে অমানবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে তীব্র কষ্টদায়ক কায়দায় তার আঙুল ও পায়ের নখ তুলে নেওয়া হয়!
বর্তমানে গুরুতর আহত আলমগীর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শরীরজুড়ে আঘাতের চিহ্ন, নখহীন আঙুল আর মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এই যুবক জানান, “আমি বুঝতেই পারিনি, ওই ফোনটাই হবে আমার জীবনের কাল। তাদের কাছে আমি এমন শাস্তি পাবো কল্পনাও করিনি।
তার ভাই জসিম উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমার ভাই যদি কোনো অপরাধ করেই থাকে, তাহলে তারা তাকে পুলিশের হাতে দিত। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে তারা যে অমানবিক আচরণ করেছে, তা মানুষ হয়ে করা যায় না। আজ সে হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।
ঘটনার বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বলেন, “আহত আলমগীরকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। মামলার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রেম-ভালোবাসা যেখানে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার কথা, সেখানে আজ এই সম্পর্কই হয়ে উঠছে ফাঁদ। একজন যুবকের জীবন বিপন্ন করে দেওয়া হলো শুধু ‘প্রাক্তন’ হওয়ার অপরাধে। এই বর্বরতা কেবল আইনের বিচারে শেষ হওয়া উচিত নয়—সমাজকেও প্রশ্ন তুলতে হবে, কীভাবে সম্পর্কের পরিণতি এমন ভয়াবহতায় গড়ায়?