চামড়া শিল্পে চরম অরাজকতা: ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের উদ্বেগ
কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। ১ জুন রোববার, রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইউসুফ আহমাদ মানসুর এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান।
সভাপতির বক্তব্যে ইউসুফ আহমাদ মানসুর বলেন, “কোরবানির পশুর চামড়া বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি সম্পদ, যা বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ আয় নিশ্চিত করে থাকে। কিন্তু প্রতিবছর দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কারণে এই চামড়ার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।”
তিনি জানান, একসময় চামড়া শিল্প ছিল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এই খাত থেকে আয় হয়েছিল ১,২৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ ধারাবাহিক অবনমনের ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭৯৭ মিলিয়ন ডলারে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আয় আরও কমে ৫৮০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। কাঁচা চামড়ার রপ্তানিতে তো ১১.৬৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েই দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬২.৪৮ মিলিয়ন ডলারে।
তিনি আরও বলেন, “সিন্ডিকেটের কারণে বহু জায়গায় চামড়া সংগ্রহ করতে না পেরে সেগুলো পচে নষ্ট হয়ে যায়, আবার কখনো কখনো মাটির নিচে চাপা দিতে হয়। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বিশাল সম্ভাবনাময় এই খাত ধ্বংসের মুখে পড়ে যাচ্ছে। এটি জাতির জন্য চরম হতাশাজনক এবং লজ্জার।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, এই খাতকে জাতীয় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে—চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও রপ্তানির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, সিন্ডিকেট দমনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান।
বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা উল্লেখ করেন, কোরবানির মৌসুম ঘনিয়ে আসছে। অতীতে যেসব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির কারণে মানুষ চামড়ার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, সেসব যেন এবার না ঘটে—সে জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুনতাছির আহমাদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ মিশকাতুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইমরান হোসাইন নূর, খায়রুল আহসান মারজান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক হোসাইন ইবনে সরোয়ার, তথ্য গবেষণা ও প্রযুক্তি সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম, দাওয়াহ ও দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ ইবরাহীম খলীল, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক মুহাম্মাদ আশিকুল ইসলাম, অর্থ ও কল্যাণ সম্পাদক এস এম কামরুল ইসলাম, প্রকাশনা সম্পাদক মাইমুন ইসলাম, যোগাযোগ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক ইউসুফ পিয়াস, স্কুল ও কলেজ সম্পাদক মুহাম্মাদ আশিক আনোয়ার, কওমি মাদরাসা সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ মাহদী ইমাম, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আরিফুল ইসলাম খান লিখন, আলিয়া মাদরাসা সম্পাদক রশীদ আহমাদ রায়হান, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক আব্দুল আজিজ নোমান, কার্যনির্বাহী সদস্য ইব্রাহীম নাসরুল্লাহ ও সাইফ মুহাম্মদ আলাউদ্দিন।
নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সরকার যদি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেয় এবং সিন্ডিকেটের অবসান ঘটিয়ে স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলে, তাহলে চামড়া শিল্প আবারও দেশের অন্যতম শক্তিশালী রপ্তানি খাতে পরিণত হবে।