পাক-ভারত সীমান্তে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। চলমান সংঘাতের নতুন মোড় নিয়েছে শনিবার (১০ মে) থেকে, যখন পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বানিয়ান মারসুস’।
এই নামটি কোরআনের ৬১ নম্বর সূরা, আস-সফ-এর ৪ নম্বর আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ভালোবাসেন তাদের, যারা তাঁর পথে যুদ্ধ করে এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে, যেন তারা সীসা গলানো কাঠামোর মতো এক অটুট গঠন।” এর দ্বারা বোঝানো হয়েছে মুসলিম যোদ্ধাদের ঐক্য, প্রতিরোধ এবং দৃঢ় সংকল্প। এই আয়াত থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে পাকিস্তান তার সামরিক অভিযানের নামকরণ করেছে।
‘বানিয়ান মারসুস’ শব্দবন্ধটি আরবি, যার অর্থ “সীসা দিয়ে তৈরি শক্ত কাঠামো”। আল জাজিরার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নামকরণ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কেবল একটি ধর্মীয় রেফারেন্স নয়, বরং এর মাধ্যমে দেশটি তাদের প্রতিরোধ এবং ঐক্যের বার্তা বিশ্ববাসীকে দিতে চাচ্ছে।
কাশ্মীর থেকে শুরু:
বর্তমান এই সামরিক উত্তেজনার সূচনা হয় ২২ এপ্রিল, যখন ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এক বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ভারত সরাসরি এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। নয়াদিল্লির দাবি, হামলাকারীদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা এসেছে ইসলামাবাদ থেকে। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে এবং ঘটনার নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে।
এর কিছুদিন পর, ৭ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। ওই ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় হামলা-পাল্টা হামলার চক্র। সীমান্তে গোলাগুলি, ড্রোন হামলা ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার খবর আসছে একের পর এক। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং রাষ্ট্র এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, তুরস্ক—সবাই দুই দেশকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত সরাসরি কোনো মধ্যস্থতা শুরু হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অভিযান কেবল সামরিক নয়—এটি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং কৌশলগত বার্তা। ইসলাম ধর্ম ও কোরআনের দৃষ্টিকোণ থেকে অভিযানের নামকরণ করে তারা তাদের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছে, এবং বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চাইছে যে, এটি তাদের দৃষ্টিতে একটি ন্যায্য লড়াই।
কী হবে ভবিষ্যৎ?
দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও সীমান্তজুড়ে যে রকম সেনা সমাবেশ এবং আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চলছে, তাতে করে পরিস্থিতি দ্রুতই আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। কূটনৈতিক মহলে আশঙ্কা, যদি এই উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠবে।
সংবাদটি সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। পাকিস্তানের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে সামরিক অভিযান চালানো এবং ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিরোধের ঘোষণা—এই দুইয়ের সমন্বয়ে এই ঘটনার তাৎপর্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।