close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

খালাস পাবেন জামায়াত নেতা আজহার, প্রত্যাশা আইনজীবীর

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আপিলের রায় আজ। সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে আইনজীবীদের প্রত্যাশা, আজহার খালাস পাবেন—তবে বি..

বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামী নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের রায় আজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই রায়ের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে—আজহার ফাঁসি হবেন, নাকি আদালতের দরজা পেরিয়ে মুক্তির আলো দেখবেন।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) এই রায় ঘোষণা করবেন। দীর্ঘ শুনানি ও নানা আইনি প্রক্রিয়ার পর এই রায় ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং জনমনে ব্যাপক আগ্রহ।

আইনজীবীদের প্রত্যাশা: খালাস

আজহারের প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আইন, তথ্যপ্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবে এবং ইনশাল্লাহ, আমাদের মক্কেল এটিএম আজহারুল ইসলাম খালাস পাবেন।” শুনানিকালে তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রায়হান উদ্দিন, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনসহ একাধিক আইনজীবী।

জামায়াতে ইসলামীর উচ্চপর্যায়ের নেতারাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, ড. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

আদালতের দীর্ঘ পথচলা: পর্বে পর্বে রিভিউ ও শুনানি

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির আদেশ দেন। অভিযোগ ছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, নির্যাতনসহ ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। শুধু ১২৫৬ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

এরপরই ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি ১১৩টি যুক্তির আলোকে আজহারের পক্ষে খালাস চেয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা। আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয় ৯০ পৃষ্ঠার মূল আপিল ও ২৩৪০ পৃষ্ঠার যুক্তিতর্ক।

২০২4 সালের শুরু থেকেই আপিলের শুনানি ধাপে ধাপে এগোয়। ২৩ জানুয়ারি রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য প্রথম তারিখ ধার্য হলেও বিচারপতির অনুপস্থিতিতে তা পিছিয়ে যায়। পরবর্তী শুনানিতে, ২০ ফেব্রুয়ারি, শুনানি অনুষ্ঠিত না হওয়ায় আবারও নতুন তারিখ ধার্য হয়।

সর্বশেষ ৮ মে, আপিল শুনানি শেষ হলে আদালত রায়ের জন্য আজকের দিনটি নির্ধারণ করেন। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা, যেখানে রিভিউ থেকে মূল আপিল শুনানির অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

অন্যদিকে প্রসিকিউশনের অবস্থান: অপরাধ প্রমাণিত

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে যে প্রমাণ, সাক্ষ্য ও তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, তা সন্দেহাতীতভাবে তার দোষ প্রমাণ করে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “এই মামলায় ফাঁসির রায়ই যথার্থ বিচার। মানবতাবিরোধী অপরাধে কোনো ছাড়ের সুযোগ নেই।”

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই রায়কে ঘিরে জামায়াতের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আজহারের বিরুদ্ধে মামলাটি ‘প্রহসনের বিচার’ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার চাই শীর্ষক সংগঠনগুলো বলছে, ইতিহাসের দায়ে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।

আজকের রায়: জাতীয় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু

আজকের রায় শুধু একজন ব্যক্তির ভাগ্য নির্ধারণ করবে না; এটি প্রভাব ফেলবে দেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের বিশ্বাস ও ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার প্রক্রিয়ার ওপরও। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক ইতিহাসে এটিএম আজহারের মামলাটি একটি নজির হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সকল দৃষ্টি এখন সুপ্রিম কোর্টের দিকে। আদালতের এক ঘোষণাতেই বদলে যেতে পারে জামায়াত নেতা আজহারের ভাগ্য—ফাঁসির মঞ্চ, নাকি মুক্তির আলো?

कोई टिप्पणी नहीं मिली


News Card Generator