close
ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!
কোনো রকম ভূমিকা ছাড়াই বলা যায়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে প্রধান তিন শক্তি—আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জামায়াত—নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ সমস্যায় জর্জরিত। এরই মধ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা, দিল্লি-ঢাকার শীতল সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পালাবদল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাজনীতির অচলাবস্থা ও দ্বন্দ্ব
বাংলাদেশের রাজনীতি এক ভয়াবহ স্থবিরতার মধ্যে রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার রাজনীতির পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সরকার যেই অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, তা রাতারাতি উন্নতির পথে যেতে পারেনি। বর্তমান সরকারের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা এবং তৃণমূল নেতাদের অবহেলা দলকে ভেতর থেকে দুর্বল করে ফেলেছে। দলীয় নেতৃত্বের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস ও অনাস্থা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
একই অবস্থা বিরোধী দল বিএনপির। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান নেতৃত্বে আসার পর থেকে দলের মধ্যে ভাঙন ও দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। বিএনপির প্রবীণ নেতারা সক্রিয় হলেও দলীয় ঐক্য আজও প্রশ্নের মুখে। দলের অভ্যন্তরে পদ-পদবি নিয়ে হরহামেশা চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং বিতর্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জামায়াতও একই সংকটে জর্জরিত। একসময়কার এলিট নেতৃত্ব এখন আবারও দলের অভ্যন্তরে আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। বর্তমান আমিরের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে জামায়াতের অভিজাততন্ত্র পুরোদমে ফিরে আসছে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জেরবার হয়ে পড়েছে দলের সংগঠন।
অর্থনীতির ভয়াবহ অবস্থা
রাজনীতির এই অচলাবস্থা দেশের অর্থনীতিকেও ভয়ংকর দুরবস্থায় ঠেলে দিয়েছে। করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে শিল্প উৎপাদন কমেছে। বেকারত্বের হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। হাজার হাজার শিল্পকারখানা ও ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন বিনিয়োগ আসছে না, বরং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ব্যাংকিং সেক্টরও ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। কয়েক হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়েছে কিংবা শূন্য হয়ে গেছে। অতীতে যেসব অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো, সেগুলো এখন ধুঁকছে। অধিকাংশ ব্যাংক নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ রেখেছে। এর ফলে দেশের আর্থিক খাত একপ্রকার ‘আইসিইউতে’ রয়েছে।
মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। টাকার মূল্যমান ক্রমাগত কমে যাওয়ায় আমদানি বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভোক্তাশ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বাজারে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের পাশাপাশি সমাজেও ভয়াবহ অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। অবিশ্বাস, সন্দেহ ও অনাস্থা মানুষের মধ্যে এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন তৈরি করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও এই অবস্থা স্পষ্ট। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যেমন দ্বন্দ্ব রয়েছে, তেমনি দলের ভেতরেও নতুন বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে।
উপসংহার
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলা যায়, বাংলাদেশ ভয়ংকর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার সব স্তরেই অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে। সংকট থেকে বের হওয়ার কোনো সুস্পষ্ট পথ চোখে পড়ছে না। জনগণের ক্ষোভ ও হতাশার মধ্যেই রাজনীতিবিদরা নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ আরও গভীর সংকটের দিকে ধাবিত হতে পারে।
"গভীর অন্ধকারের মধ্যে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ধেয়ে চলেছে দেশ। এই অচলাবস্থা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করা এখন সময়ের দাবি।"
"সমস্যার সাগরে ভাসতে থাকা বাংলাদেশ কি উত্তরণের পথ খুঁজে পাবে
Aucun commentaire trouvé