close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

খা'মে'নি'কে সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ই'রা'নে'র আলেম পরিষদ নির্বাচিত করেন..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরানের প্রকৃত ক্ষমতার উৎস প্রেসিডেন্ট নয়, বরং এক রহস্যময় ধর্মীয় নেতার হাতে—আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার আসনে বসে থাকা এই পুরুষকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল পর্যন্..

বিশ্বের বহু দেশের তুলনায় ইরানের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভিন্ন। এখানে প্রেসিডেন্ট, সংসদ, এমনকি সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি ক্ষমতার অধিকারী হলেন একজন ধর্মীয় নেতা—সর্বোচ্চ নেতা নামে পরিচিত। সেই পদে দীর্ঘ তিন দশক ধরে আছেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি, যার ছায়ায় পরিচালিত হচ্ছে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং একটি ধর্মভিত্তিক প্রজাতন্ত্রের সূচনা হয়। বিপ্লবের স্থপতি আয়াতুল্লাহ খোমেনি মারা যাওয়ার পর ১৯৮৯ সালে তাকে উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেয় বিশেষজ্ঞদের ধর্মীয় পরিষদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বহাল তবিয়তে এই পদে আছেন—প্রতিবাদ, ষড়যন্ত্র আর বৈদেশিক চাপের মধ্যেও টিকে আছেন এক শক্তিশালী ‘ছায়া পুরুষ’ হিসেবে।

আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির জন্ম ১৯৩৯ সালে, উত্তর-পূর্ব ইরানের মাশহাদ শহরে। শৈশব থেকেই ইসলামি জ্ঞানের চর্চায় মনোনিবেশ করেন। কৈশোরেই তিনি যান শিয়া ইসলামের পবিত্র কেন্দ্র কোম শহরে, যেখানে ইমামদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে গড়ে ওঠে তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি।

খামেনির রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৬২ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে। বারবার গ্রেফতার হন, কিন্তু দমে যাননি। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের সফলতার পর তিনি দেশ পরিচালনার দায়িত্বশীল পদে আসীন হন, প্রথমে উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী, পরে প্রেসিডেন্ট এবং অবশেষে সর্বোচ্চ নেতা।

১৯৮১ সালে, তেহরানের এক মসজিদে বোমা হামলায় খামেনি মারাত্মক আহত হন। ডান হাত চিরতরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু এই হামলা যেন তার রাজনৈতিক জীবনের দৃঢ়তা আরও বাড়িয়ে দেয়।

দুই মাস পর, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ-আলি রাজাই নিহত হলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন খামেনি। আট বছর সেই পদে দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৯ সালে হন সর্বোচ্চ নেতা।

খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার সময় ‘গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ’ উপাধি অর্জন করেননি। তবে তার জন্য ইরানের সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়। রাতারাতি হোজ্জাতুল ইসলাম থেকে তাকে 'আয়াতুল্লাহ' পদে উন্নীত করা হয়। তার শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী পদের বিলুপ্তি ঘটে এবং রাষ্ট্রপতির হাতে বড় কিছু ক্ষমতা গেলেও তিনি সব সময় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী রয়ে যান।

সেসময় থেকেই ইরানে যারাই প্রেসিডেন্ট হন, তারা খামেনির নীরব ছায়ায় চলে আসেন। সংস্কারপন্থী মোহাম্মদ খাতামি, কট্টরপন্থী আহমাদিনেজাদ, উদারপন্থী রুহানি—সবার ওপর ছড়ি ঘোরাতেন এই এক ব্যক্তি। কেউ কেউ চ্যালেঞ্জের চেষ্টা করলেও শেষপর্যন্ত খামেনির ইচ্ছার বাইরে যেতে পারেননি কেউই।

খামেনির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কম হয়নি। সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন, "ইরানের সর্বোচ্চ নেতা কোথায় লুকিয়েছেন, তা আমরা জানি, কিন্তু এখনই তাকে মারা হবে না।" এই মন্তব্য বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দেয়।

প্রশ্ন ওঠে, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান নয়—খামেনিই কেন টার্গেট?

কারণটা স্পষ্ট—ইরানের প্রকৃত শক্তির উৎস প্রেসিডেন্ট নয়, বরং এই একক নেতা, যিনি পরমাণু চুক্তি, যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা, এমনকি প্রতিবিপ্লব সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ করেন এককভাবে।

২০২০ সালে আমেরিকার ড্রোন হামলায় কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পর খামেনির প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। তিনি ঘোষণা দেন, “আমেরিকার গালে চপেটাঘাত” দিতে হবে। এরপরই ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে।

খামেনি এটিকে প্রতিশোধের শুরু বললেও তার শীতল, পরিকল্পিত ও পরোক্ষ কৌশল বরাবরই ইরানের বৈদেশিক নীতিতে দৃশ্যমান।

খামেনি বহুবার বলেছেন, ইসরায়েলকে ধ্বংস করতেই হবে। ২০১৮ সালে তিনি ইসরায়েলকে ‘ক্যানসার টিউমার’ বলে আখ্যায়িত করেন এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে মুছে ফেলার হুমকি দেন। তিনি হলোকাস্ট সম্পর্কেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার এ ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তোলে, কিন্তু ইরানে জনসমর্থন আদায় করে নেয়।

আয়াতুল্লাহ খামেনির শাসন ব্যবস্থা নিয়ে যত বিতর্কই থাকুক না কেন, তিনিই ইরানের বাস্তব নেতা। রাষ্ট্রপতি বদলায়, সরকার বদলায়, বৈদেশিক নীতির দিকও বদলায়—কিন্তু বদলায় না শুধু এক ব্যক্তি—আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনিই সেই ব্যক্তি, যিনি ছায়ার আড়াল থেকে একা হাতে ইরানের ভাগ্য গড়ে চলেছেন।

لم يتم العثور على تعليقات