আনহেল ডি মারিয়ার গল্পটাও ঠিক তেমন ই। দীর্ঘ ১৮ বছর ইউরোপীয় বড় বড় ক্লাবে খেলা ও নিজেকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া! ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়েই ইউরোপের যাত্রা শেষ করবেন তিনি, জানিয়েছিলেন আগেই। তবে ক্লাব বিশ্বকাপেও যাত্রা টা বেশি দীর্ঘ হয়নি। চেলসির কাছে ৪-১ গোলের হারে আসর থেকে ছিটকে যায় তার ক্লাব বেনফিকা। ম্যাচে একটি গোলের দেখাও পান তিনি।
চেলসির বিপক্ষে ৬৪ মিনিটে পিছিয়ে পড়া বেনফিকাকে যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরান দি মারিয়া। ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গেলে সেখান থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি বেনফিকা৷ ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বেনফিকার বিদায় একই সঙ্গে ক্লাবটি থেকে দি মারিয়ার বিদায়ও নিশ্চিত করেছে। শেষ বেলায় অশ্রুতে মিশে যায় তার নয়ন দুটো। শৈশব ক্লাবে যাওয়ার আগে নিয়ে যাচ্ছেন গর্ব করার মতো উজ্জ্বল সব স্মৃতি।
শেষ টা যে ক্লাব দিয়ে করলেন, ইউরোপ শুরুর যাত্রা টাও ছিলো এই ক্লাবেই। ২০০৭ সালে রোজারিও সেন্ট্রাল থেকে বেনফিকায় ইউরোপ অভিযান শুরু করেন দি মারিয়া। ২০০৭ থেকে ২০১০, তিন বছরে লিগ শিরোপা সহ পাঁচটি ট্রফি জয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। বেনফিকা তে দারুণ পারফরম্যান্স করার পর নজরে পরে রিয়াল মাদ্রিদের। ২০১০ মালে বেনফিকা ছেড়ে রিয়ালে এসে জুটি বাঁধেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে।
২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল, এই ৪ বছরে রিয়ালের হয়ে জিতেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগ সহ ছয়টি শিরোপা। ১৪ সালে মাদ্রিদ ছাড়ার পর তিনি যান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। অবশ্য সেখানে গিয়ে কোনো ট্রফি জিততে পারেননি। এক বছর ইউনাইটেডে থাকার পর পাড়ি জমান ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে। ক্লাব ক্যারিয়ারে দীর্ঘ সময় এই ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ২০২০ সালের নিজের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার খুব কাছে ছিলেন তিনি। তবে, বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ১-০ গোলে হেরে সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়।
পিএসজির হয়ে ২০১৫ থেকে ২০২২—এই ৭ বছরে ৫টি লিগ শিরোপাসহ জিতেছেন ১৯টি ট্রফি। ২২ সালে পিএসজি ছাড়ার পর এক বছরের জন্য যান ইতালিয়ান ক্লান জুভেন্টাসে। এরপর ২০২৩ সালে চলে যান ইউরোপে নিজের প্রথম ক্লাব বেনফিকায়। সেটাই ছিল মূলত তাঁর শেষের শুরু। অবশেষে চেলসির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শেষ হলো তার ইউরোপীয় যাত্রা।
জাতীয় দলের হয়ে যেমন নিরবে কাজ করেছেন তিনি, তেমনি ক্লাব ফুটবলেও। একজন আনসাং হিরো যাকে বলা হয়। আর্জেন্টিনার হয়ে সব গুলো ফাইনালে গোল করেছেন তিনি। ২০১৩-১৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল ম্যাচেও ম্যাচ সেরা হন তিনি। একই বছর জিতেছিলেন আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও
জাতীয় দল কে বিদায় বলেছেন ২০২৪ কোপা আমেরিকা জয়ের পরেই। এখন বাকি শুধু যে রোজারিও সেন্ট্রালের হয়ে শুরু করেছিলেন, সেখানে গিয়ে বিদায়ী বিউগলটা। আসল শেষের শুরু অতি দ্রুতই।