নেত্রকোনায় এক ভাড়াটিয়া গৃহবধূকে কবিরাজি চিকিৎসার নামে ধোঁকা দিয়ে ধর্ষণের ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে এক বাসার মালিকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন (৪৭) একই এলাকার বাসিন্দা ও বাড়ির মালিক। রোববার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শহরের পারলা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরদিন সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নেত্রকোনা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ।
পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার ওই নারী তার স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে আনোয়ার হোসেনের বাসায় ভাড়া থাকতেন। দীর্ঘদিন ধরেই আনোয়ার নিজ বাসায় কবিরাজি চিকিৎসার নামে ভেষজ ওষুধ প্রয়োগ করে বিভিন্ন মানুষকে চিকিৎসা দিতেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি ধীরে ধীরে গৃহবধূর ওপর কুনজর দেন।
সূত্র জানায়, আনোয়ার গৃহবধূকে একাধিকবার কুপ্রস্তাব দেন। গৃহবধূ সেসব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আনোয়ার এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। অবশেষে ২৩ মার্চ সকাল ১১টার দিকে তিনি নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে ‘চিকিৎসা’ করার অজুহাতে গৃহবধূকে একটি ভেষজ ওষুধ খেতে দেন। ওষুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই গৃহবধূ অচেতন হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় আনোয়ার তাকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ওই নারী জ্ঞান ফিরে পেলে আনোয়ার তাকে চুপ থাকতে হুমকি দেন। কিন্তু এর পরেও ২৪ ও ২৫ মার্চ একইভাবে আবারও ধর্ষণ করেন তিনি। ঘটনার ভয়াবহতা এবং আতঙ্কে কিছুদিন নীরব থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোববার সকালে স্বামীকে সব খুলে বলেন নির্যাতিতা। পরে স্বামী বিষয়টি স্থানীয়দের জানান এবং আইনি পরামর্শ নেন।
রোববার বিকেলে গৃহবধূ ও তার স্বামী নেত্রকোনা মডেল থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা জানালে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে আনোয়ারকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ প্রসঙ্গে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, "ভিকটিম ও তার স্বামীর বক্তব্য এবং প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার সকালে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, আমরা নিরপেক্ষভাবে সবকিছু যাচাই করে দেখছি।"
তবে গ্রেপ্তারকৃত আনোয়ারের পরিবারের একজন সদস্য দাবি করেন, “আনোয়ার নির্দোষ। হয়তো তাকে ফাঁসানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। আমরা চাই, পুলিশ যেন নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে।”
নেত্রকোনার সচেতন মহল এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পর এমন ভয়ানক অভিজ্ঞতা কোনো নারীর জীবনে ঘটলে তা শুধু পরিবার নয়, সমাজকেও নাড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন স্থানীয়রা।