close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

কাশ্মীর সীমান্তে সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলি

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
কাশ্মীর সীমান্তে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ! ভারত ও পাকিস্তানের সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখায় বিনা উসকানিতে গুলি চালিয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। বিস্তারিত জানতে পড়ুন.........

কাশ্মীর সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়: ভারত-পাকিস্তান সেনাদের গোলাগুলিতে বাড়ছে উত্তেজনা

ভারত ও পাকিস্তানের পুরোনো বৈরিতার আগুন যেন আবারও জ্বলতে শুরু করেছে কাশ্মীর সীমান্তে। রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ফের গোলাগুলি হয়েছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ভারতের জাতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া এই খবর প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ এবং কুপওয়া জেলায় ফের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তানি সেনারা। ভারতীয় সেনা সূত্রে জানা গেছে, রাতে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই পাকিস্তানি সেনা চৌকিগুলো থেকে গুলি চালানো হয়। ছোট অস্ত্রের পাশাপাশি মাঝারি মানের আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের একজন মুখপাত্র পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ২৭-২৮ এপ্রিল রাতের মধ্যে, কুপওয়া ও পুঞ্চ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বিনা উসকানিতে পাকিস্তানি সেনারা গুলি চালিয়েছে। তাদের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনারা ‘উপযুক্ত জবাব’ দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ হতাহত হওয়ার নির্ভরযোগ্য তথ্য নিশ্চিত করেনি।

পেছনের ঘটনা: রক্তাক্ত পেহেলগাম হামলা

কাশ্মীরের উত্তপ্ত পরিস্থিতির সূত্রপাত মূলত কয়েকদিন আগেই ঘটে। গত ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। 'মিনি সুইজারল্যান্ড' নামে পরিচিত এই এলাকায় ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ২৫ জন নিরীহ পর্যটক। নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন নেপালের নাগরিক। এ ছাড়া এক সাহসী কাশ্মীরি বাসিন্দাও হামলায় প্রাণ হারান, যিনি একজন সন্ত্রাসীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

এই মর্মান্তিক হামলার পরে ভারতজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠে। কূটনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভারত সরকার দ্রুত একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো সিন্ধু পানি চুক্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করার ঘোষণা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণে ঘোষণা দেন, ‘‘আমরা এই হামলার কঠোর জবাব দেব। দোষীদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’’

পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান সরকার ভারতীয় পদক্ষেপকে যুদ্ধের উসকানি বলে অভিহিত করেছে। ইসলামাবাদ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গের সামিল এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তান একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছিল, যা দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর ছিল। তবে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপের ফলে এই চুক্তি এখন চরম পরীক্ষার মুখে পড়েছে।

পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ কি?

বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা আরও ভয়াবহ সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে যদি দ্রুত কূটনৈতিকভাবে সমাধান না করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিবার সংঘর্ষের ফলে কাশ্মীরের নিরীহ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন।

কাশ্মীরের সাধারণ জনগণ এখন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলো আবারও আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে। সবার মনে একই প্রশ্ন — দুই দেশের এই পুরনো শত্রুতার অবসান কবে হবে?

শেষ কথা

কাশ্মীর যেন দুই দেশের অহংকারের যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তির আকাঙ্ক্ষা থাকলেও প্রতিবারই নতুন করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও দুই দেশের কাছে দ্রুত উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে — ভারত ও পাকিস্তান কি সংঘাতের পথে যাবে, নাকি শান্তির আশায় কোনও নতুন অধ্যায় রচনা করবে?

کوئی تبصرہ نہیں ملا