ঢাকার আদালত চত্বরে আজ ছিল ব্যতিক্রমী দৃশ্য। বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির হন এবং ঠিক courtroom-এর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে খবর পান—তিনি বাবা হতে যাচ্ছেন! আর এই চমকপ্রদ সংবাদটি দেন তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী ইসরাত জাহান প্রিয়া, যিনি ছিলেন মামলার বাদী। ঘটনাটি শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, গোটা দেশজুড়ে কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে।
নোবেলের মুখে দেখা যায় হাস্যোজ্জ্বল স্বভাব, courtroom-এ উপস্থিত প্রিয়াও কম যান না। হাসিমুখে একে অপরের পাশে কিছু সময় কথা বলেন তারা, যেন কোনও চাপে নেই কেউ। অথচ, এই সম্পর্কের সূত্রপাত কিন্তু একটি ভয়াবহ অভিযোগের মধ্য দিয়ে।
গত ২০ মে থেকে কারাবন্দি থাকা নোবেলের বিরুদ্ধে ডেমরা থানায় নারী নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন প্রিয়া নিজেই। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাত মাস ধরে একটি বাসায় আটকে রেখে নোবেল তাকে ধর্ষণ ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন।
মামলার শুনানিতে ১৮ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক নাজমিন আক্তার জামিনের শর্ত হিসেবে বাদী প্রিয়াকে বিয়ে করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, ১৯ জুন কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করেন নোবেল ও প্রিয়া।
এই বিয়েতে কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উভয় পরিবারের সদস্যরা। বিয়ের দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় ১০ লাখ টাকা। তবে যা আজকের দিনের সবচেয়ে বড় চমক—তা হলো, এই দম্পতি এখন অপেক্ষা করছেন তাদের প্রথম সন্তানের আগমনের জন্য!
আজ আদালতে হাজিরার সময় এক হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহাবুব। তবে কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়ায় পুলিশ নোবেলকে আবারও কারাগারে নিয়ে যায়। আদালত ভবনের প্রতিটি ধাপে স্ত্রী প্রিয়ার হাত ধরে হাঁটতে দেখা গেছে নোবেলকে, এমনকি লিফটে ওঠার সময়ও দু’জনের ঘনিষ্ঠতা চোখে পড়ে।
প্রিয়া এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমি এই মুহূর্তে শান্তিতে আছি। আমরা খুব শিগগিরই বাবা-মা হতে যাচ্ছি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।” জামিনে তার আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। নোবেল অবশ্য এখনো গণমাধ্যমের সামনে কোনো মন্তব্য করেননি।
গায়ক নোবেল এর আগেও নানা কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তার রাজনৈতিক মন্তব্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বিষয় বহুবার আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। তবে এই ঘটনা যেন সব বিতর্ক ছাড়িয়ে এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে তার জীবনে।
অনেকে বলছেন, এই ঘটনা যেমন আইনের ব্যতিক্রমী প্রয়োগের উদাহরণ, তেমনি একটি সম্পর্কের রূপান্তরের নজিরও বটে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—সত্যিই কি এটা একটি ভালোবাসার গল্প, না কি আইনি বাধ্যবাধকতায় গঠিত এক সম্পর্ক?
নোবেল ও প্রিয়ার এই আদালত কেন্দ্রিক প্রেম, বিয়ে এবং বাবা-মা হওয়ার খবর নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি অন্যতম আলোচিত অধ্যায় হয়ে থাকবে।
আপাতত, দর্শক-শ্রোতা এবং সমাজ দুই-ই অপেক্ষা করছে—নোবেল নিজে কবে এই ঘটনায় মুখ খুলবেন, এবং কারাগার থেকে বেরিয়ে নতুন জীবনের পথে কতটা এগিয়ে যেতে পারবেন?