কালোটাকা সাদা করার সুবিধা তুলে দেওয়া হবে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
আগামী বাজেটে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ বাতিলের ইঙ্গিত দিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সুযোগ যেমন অকার্যকর, তেমনি সমাজে বৈষম্যও বাড়ায়। অন্যদিকে, পোশাক শিল্প মালিকর..

আগামী অর্থবছরের বাজেটে কালোটাকা বৈধ করার (অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ) সুবিধা তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

শনিবার রাজধানীতে গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিড আয়োজিত বাজেট বিষয়ক এক আলোচনায় তিনি বলেন, “কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বাস্তবে খুব একটা কাজ করে না। কেউ যদি পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় করে একটি সম্পদ কিনে, অথচ আয়কর বিবরণীতে এক কোটি টাকাও দেখাতে না পারে, তাহলে এই ধরনের নীতির কোনো প্রয়োজন নেই।”

তিনি আরও বলেন, “যত বিতর্কই হোক, বাস্তবে এই সুযোগ সমাজে ন্যায়বিচারহীনতা সৃষ্টি করে এবং সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্য তৈরি করে। তাই সময় এসেছে এই সুবিধা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার।

তবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এটাও জানান যে, একেবারে ‘অপ্রদর্শিত অর্থ’ হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট ও সীমিত সুযোগ বাজেটে রাখা হতে পারে। তবে সেটি আগের মতো ‘কালোটাকা বৈধ করার বিশেষ স্কিম’ আকারে থাকবে না।

একই আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প মালিকরা এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে ‘অপরিকল্পিত’ আখ্যা দেন।

বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, “আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি ঠিক, কিন্তু প্রস্তুতি ছিল একদমই অপর্যাপ্ত। এই উত্তরণ আমাদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এলডিসি স্ট্যাটাস হারানোর ফলে যেসব আন্তর্জাতিক শুল্ক সুবিধা এবং বাণিজ্যপ্রথা উপভোগ করছিলো বাংলাদেশ, তা একে একে হারাতে হতে পারে। এতে পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

আলোচনায় অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদরা বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী যুগে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার হবে। এটি উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।

তাদের মতে, শুধুমাত্র অবকাঠামো নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নেও সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত। নতুবা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলেও বাস্তবিক অর্থে দেশের অর্থনীতি ততটা লাভবান হবে না।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান আলোচনায় বলেন, “আমরা ২০২১ সালেই এলডিসি উত্তরণ ঘটিয়েছি। প্রথম তিন বছর পার করার পর বর্তমানে এক ধরনের ‘গ্রেস পিরিয়ড’-এ আছি। নতুন করে আবার তিন বা পাঁচ বছরের জন্য সময় চাওয়া হলে, তা হয়তো কিছুটা রাজনৈতিক আবদার হতে পারে।

তিনি বলেন, “তবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তিতে ছাড়পত্রের জন্য কৌশলগত প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। শুধু আবদার নয়, যুক্তি ও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেই সময় প্রার্থনা করতে হবে।

বাংলাদেশের বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এবার সেই বিতর্কের অবসান ঘটাতে যাচ্ছে সরকার—এমনটাই আভাস দিলেন অর্থনৈতিক পরামর্শকরা। আর এলডিসি উত্তরণকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া আলোচনায় উঠে আসলো যে, প্রস্তুতির ঘাটতি এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে শিল্প ও অর্থনীতির জন্য।

Nema komentara


News Card Generator