রুশ পতাকাবাহী ট্যাংকারে একের পর এক হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই হামলাকে সরাসরি 'দস্যুতা' হিসেবে উল্লেখ করে তিনি গতকাল এক বিবৃতিতে ইউক্রেনকে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই মন্তব্যের ফলে কালো সাগর এবং এর পার্শ্ববর্তী জলপথকে কেন্দ্র করে নতুন করে সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর এই পদক্ষেপকে ‘দস্যুতা’ আখ্যা দিয়ে বলেন, যদি এই ধরনের হামলা অব্যাহত থাকে, তবে রাশিয়া পাল্টা আঘাত হানতে বাধ্য হবে। তাঁর ভাষ্যমতে, প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ইউক্রেনের বন্দর এবং সেখানে প্রবেশকারী জাহাজগুলো রাশিয়ার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই প্রথমবার এতো সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর ভাষায় নৌ-অবরোধের হুমকি দেওয়া হলো। ৭৩ বছর বয়সী এই রুশ নেতা বলেন, “সবচেয়ে বড় বিকল্প হলো ইউক্রেনকে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। তখন দস্যুতা করা আর সম্ভব হবে না।” এই পদক্ষেপ কার্যকর হলে ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য তা হবে মারাত্মক আঘাত, কারণ তাদের শস্য রপ্তানির একটি বড় অংশই এই জলপথ দিয়ে সম্পন্ন হয়।
পুতিন কেবল ইউক্রেনের বন্দর বা জাহাজে হামলার হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি আরও যোগ করেন, “যদি এসব দস্যুতা চলতে থাকে, আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করব— আমি বলছি না আমরা করব, কিন্তু আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই করব— যেসব দেশ ইউক্রেনকে সহায়তা করছে তাদের জাহাজের ওপর হামলার চালানোর কথা।” তাঁর এই বক্তব্য প্রকারান্তরে ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি একটি প্রচ্ছন্ন সামরিক হুমকি।
গত দুই দিনে সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে রাশিয়ার কমপক্ষে তিনটি ট্যাংকারে হামলা চালানো হয়েছে বলে ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। এই হামলার পরপরই পুতিনের এমন কঠোর হুঁশিয়ারি এল। এই ঘটনার পর ইউক্রেনের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন হামলার পরিণতি নিয়ে ভেবে দেখেন, সেই আশাও প্রকাশ করেন পুতিন।
এই সামরিক উত্তেজনার মধ্যেই শান্তি ফেরানোর চেষ্টা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকোফ এবং জের্ড ক্রুসনার যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তিচুক্তি করতে মস্কো সফর করেন। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হলেও ইউরি উসাকোভ জানিয়েছেন, এ আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। সামরিক সংঘাত বন্ধের আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার ঠিক পরেই পুতিনের এই নতুন সামরিক হুমকি যুদ্ধের মোড়কে আরও জটিল করে তুলল।



















