ফেনীতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে ‘জুলাই সনদ’ দাবিতে। মঙ্গলবার (১৮ জুন) বিকালে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারীরা—পরিচিত ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। সেখান থেকে শুরু হয় একটি বিক্ষোভ মিছিল, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে এসে আবারও শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
এটি ছিল শুধুমাত্র একটি সাধারণ মিছিল নয়—বরং এটি ছিল এক স্পষ্ট বার্তা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জুলাই যোদ্ধারা এবার আর মুখ বুজে বসে থাকতে চান না। তাদের দাবি একটাই—‘জুলাই সনদ’ ও ‘ঘোষণাপত্র’ অবিলম্বে দিতে হবে। কারণ, তাদের ভাষায়, “সময় শেষ হয়ে এসেছে।”
মিছিল শেষে তারা অবস্থান নেন শহরের ব্যস্ততম এলাকা দোয়েল চত্বরে। সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান। ফলে শহরের স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়, সাধারণ মানুষও পড়ে ভোগান্তিতে। তবে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা অনেক সময় অপেক্ষা করেছি। আমরা আর কালক্ষেপণ চাই না। অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’ দিতে হবে। এদেশের মাটিতে আমাদের রক্ত, আমাদের আত্মত্যাগ যেন ইতিহাসে না মুছে যায়।
একজন আন্দোলনকারী বলেন, “আমরা যদি এখনই স্বীকৃতি না পাই, ভবিষ্যতে আমাদের এই আন্দোলনকেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে দাগিয়ে দেওয়া হবে। তাই আমাদের দাবি- অবিলম্বে সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে।”
বক্তারা আরও বলেন, জুলাই গণআন্দোলন ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অথচ আজও এই ঐতিহাসিক ঘটনার কোনো সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। তারা দাবি করেন, সরকার যদি এই সুযোগেও পিছিয়ে পড়ে, তাহলে ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না।
মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শহরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও কোনো ধরনের সহিংসতা ঘটেনি। আন্দোলন ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, জুলাই গণআন্দোলনকে কেন্দ্র করে এর আগেও বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ-সমাবেশ হয়েছে। তবে এবারের কর্মসূচিতে শহীদ পরিবারদের যুক্ত হওয়ায় আন্দোলন আরও একধাপ গুরুত্ব পেয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি সরকার দ্রুত কোনো ইতিবাচক বার্তা না দেয়, তাহলে এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ এটি এখন শুধুমাত্র একটি সনদ দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—এটি রূপ নিয়েছে আত্মপরিচয়ের, সম্মানের, ও ইতিহাসের ন্যায্যতার আন্দোলনে।