দমনপীড়ন, লুটপাট আর গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরার ইতিহাস—সব মিলিয়েই ‘জুলাই’ হয়ে উঠেছিল অনিবার্য। আসিফ মাহমুদ জানালেন সেই সময়ের ভেতরের চিত্র।
জুলাই মাসটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় নিয়েছিল—যা হঠাৎ নয়, বরং পূর্বপ্রস্তুতির ফসল। কেন ‘জুলাই’ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
রবিবার (৬ জুলাই) মধ্যরাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিকতা করার চেষ্টা যারা করেছেন, তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এমনকি ‘ন্যূনতম’ সাংবাদিকতার চেষ্টাও ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধের মতো।
আসিফ মাহমুদের ভাষ্য মতে, “প্রশ্ন নয়, প্রশংসা করতে এসেছি”—এই বাক্যেই শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের মেজাজ ধরা পড়ে। যারা তথাকথিত চাটুকার সাংবাদিকতা থেকে বেরিয়ে কিছুটা সত্য বলার চেষ্টা করতেন, তাদের ওপর চলত দমনপীড়নের খড়গ।
তিনি বলেন, এই দমন-পীড়ন এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ ছিল 'জুলাই' অনিবার্য হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী, যিনি জুলাই প্রিলিউড সিরিজের ৯ ও ১০ নম্বর পোস্টার এঁকেছেন থিম হিসেবে নিয়েছেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতাহীনতা এবং চাটুকারিতা।
শিল্পী দেবাশিস শুধু নান্দনিকভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেননি, বরং প্রতিটি পোস্টারের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন একটি সময়ের রাজনৈতিক হিংস্রতা ও ভয়াবহ লুটপাটের চিত্র। এই পোস্টারগুলো ডিজাইন করা হয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে।
আসিফ মাহমুদের পোস্টে বলা হয়, “আমার চাওয়ার কিছু নেই। আমি আসছি মানুষকে দিতে”—এই জাতীয় স্লোগানের আড়ালে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আসল চেহারা ঢাকা পড়ে থাকলেও, এখন তা একে একে উন্মোচিত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যে লাগামহীন ও অবিশ্বাস্য মাত্রার লুটপাট হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ আমলের এক গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশক হয়ে উঠেছে। এই লুটপাটকেই থিম করে দেবাশিস চক্রবর্তী এঁকেছেন জুলাই প্রিলিউড সিরিজের ৫ থেকে ৮ নম্বর পোস্টার।
প্রথমে ধারাবাহিকভাবে দশটি পোস্টার প্রকাশের পরিকল্পনা থাকলেও, জনসাধারণের আগ্রহ ও অনুরোধে এখন পোস্টারের সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে।
আসিফ মাহমুদ তাঁর পোস্টে জোর দিয়ে বলেন, "জুলাই কেবল কোনো মাস নয়, এটি প্রতিরোধের প্রতীক। এই মাসে আমরা দেখেছি কিভাবে রাষ্ট্রের ভিতরে থেকেই শিল্প, সংস্কৃতি এবং সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর দমন করা হয়েছে।"
শেষদিকে তিনি উল্লেখ করেন, শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর পোস্টারগুলো শুধু রাজনৈতিক ভাষ্য নয়, বরং একটি সময়ের দলিল হিসেবেও বিবেচিত হবে।
জুলাই কেন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল, সেটা জানাতে গিয়ে আসিফ মাহমুদ কেবল রাজনৈতিক বিশ্লেষণই দেননি, তিনি বাস্তব চিত্র ও ঘটনাগুলোকেও তুলে ধরেছেন যা বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।