যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কৌশল নিয়ে এবার মুখ খুললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এক দৃঢ় ও জ্বালাময়ী ভাষণে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন — “আমেরিকাকে এই অঞ্চল থেকে যেতে হবেই, এবং তারা এক সময় চলে যাবেই।” শনিবার তেহরানে এক বিশাল সমাবেশে এই মন্তব্য করেন তিনি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে জানা গেছে, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর ও বিপুল সামরিক বাণিজ্য চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় এই কড়া অবস্থান নিয়েছেন খামেনি।
তিনি বলেন, “মার্কিনিরা চায় উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো যেন চিরকাল তাদের সহায়তার ওপর নির্ভর করে থাকে। অথচ এই অঞ্চলের মানুষ এখন তাদের স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার জন্য লড়াই করছে। এই দৃঢ় সংকল্পের মুখে আমেরিকাকে পরাজয় মেনেই চলে যেতে হবে।”
ট্রাম্পের সফর ও চুক্তি নিয়ে ক্ষোভ:
খামেনির এই বক্তব্য এমন সময় এসেছে যখন ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করেছেন। সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এই সফরে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে।
এই সফরকালে ট্রাম্প শুধু ইরানের তেল রপ্তানি থামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেননি, বরং ইরান সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগও আনেন।
গত ১৩ মে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ইরানের নেতারা জনগণের সম্পদ চুরি করে তা ব্যবহার করছে বিদেশে সন্ত্রাস ও রক্তপাত ছড়াতে।”
এর পরদিন দেশে ফেরার পথে ট্রাম্প আরও হুঁশিয়ারি দেন — “আমরা ইরানকে একটি পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তারা জানে, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে তাদের জন্য ভয়ানক কিছু অপেক্ষা করছে।”
খামেনির কড়া জবাব: “লজ্জাজনক ও নিচু মানের কথা
এইসব মন্তব্যের জবাবে খামেনি তেহরানের এক মসজিদে বলেন, “এই সব কথা এতই নিচুস্তরের যে এগুলোর জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। এগুলো শুধু বক্তা এবং আমেরিকান জনগণের জন্য লজ্জার বিষয়।”
তিনি ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ না করেই বলেন, “তিনি যা বলছেন, তা তার রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচায়ক।”
গাজা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভণ্ডামি’
গাজায় ইসরাইলি সেনাদের হামলা এবং গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করেন খামেনি। তিনি বলেন, “ট্রাম্প দাবি করেন তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা চান। অথচ বাস্তবে তারা নিজেরাই গাজায় হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করছে, অস্ত্র দিচ্ছে, যুদ্ধ উসকে দিচ্ছে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রচেষ্টাকে ‘ভণ্ডামি’ বলে অভিহিত করেন।
আরব দেশগুলো আমেরিকা ছাড়া দশ দিনও টিকতে পারবে না!
খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ‘নির্ভরতা মডেল’কে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “এই মডেল ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই বলেছেন, আরব দেশগুলো আমেরিকা ছাড়া দশ দিনও টিকতে পারবে না। কিন্তু আমরা জানি, এই অঞ্চল নিজের পায়ে দাঁড়াতে জানে। এই সংগ্রামের পথেই আমেরিকাকে এক সময় বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হবে।”
ইসরায়েলকে ‘ক্যান্সার টিউমার’ আখ্যা
খামেনি তার ভাষণে ইসরায়েলকে আবারও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েল এই অঞ্চলের দুর্নীতি, যুদ্ধ এবং বিবাদের উৎস। এটি একটি মারাত্মক ক্যান্সার টিউমার, যাকে উপড়ে ফেলতেই হবে — এবং সেটি হবেই।”