যুক্ত রাষ্ট্রে র হা ম লা চালানো ই রা নের সেই ৩ পা রমাণ বি ক স্থাপনা কোথায়, কী আছে....

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ট্রাম্প জানালেন—যুক্তরাষ্ট্র একযোগে ইরানের ৩টি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। কোথায় এই ঘাঁটিগুলো? কী ছিল ভেতরে? উঠে আসছে ভয়ংকর সব তথ্য।....

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ানো ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শনিবার রাতে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে জানান—যুক্তরাষ্ট্র একযোগে ইরানের তিনটি শীর্ষস্থানীয় পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে।

এই তিনটি কেন্দ্র—নাতাঞ্জ, ফর্দো এবং ইস্পাহান—ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির মূল ভিত্তি। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু ইরান নয়, পুরো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন ছড়িয়ে পড়েছে। কী আছে এই কেন্দ্রগুলোতে? কেন সেগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ? বিস্তারিত জানতে হলে আপনাকে জানতে হবে প্রতিটি স্থাপনার গভীর রহস্য।

ইরানের সবচেয়ে পরিচিত পারমাণবিক স্থাপনা নাতাঞ্জ। এই কেন্দ্রটি ২০০৩ সাল থেকে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এবং ইরান এখানেই প্রথম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে—এখানে দুইটি স্থাপনায় রয়েছে ৫০ হাজার সেন্ট্রিফিউজ রাখার সক্ষমতা

সাম্প্রতিক স্যাটেলাইট চিত্র ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাতাঞ্জের ‘পাইলট ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’-এর উপরিভাগ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যে একাধিকবার এই কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে, তবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট হামলা এই স্থাপনাটিকে কার্যত অচল করে দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানকার ভূগর্ভস্থ স্থাপনার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কার্যকরভাবে সিস্টেম নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কারণ নিচের স্তরে থাকা সেন্ট্রিফিউজগুলো বিদ্যুৎ নির্ভর। এমন হামলা প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগতভাবে অত্যন্ত সচেতনভাবে আঘাত হেনেছে।

দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ফর্দো। কওম শহরের নিকটবর্তী পাহাড়ের গভীরে তৈরি এ কেন্দ্রটি এতটাই সুরক্ষিত যে বিমান হামলায় একে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। এখানকার মূল কক্ষগুলো মাটির ৮০-৯০ মিটার নিচে। এই সাইট সম্পর্কে যে তথ্য জানা গেছে, তা মূলত ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের হাতিয়ে আনা গোপন নথির সূত্রে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (ISIS) বলছে—এই ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্টে মাত্র তিন সপ্তাহে ৬০% ইউরেনিয়াম থেকে প্রায় ৯টি পারমাণবিক অস্ত্র বানানো সম্ভব। বর্তমানে এখানে ২৭০০টিরও বেশি সেন্ট্রিফিউজ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

যদিও হামলায় কেন্দ্রটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি, তবে বিদ্যুৎ ও যন্ত্রাংশের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। এই হামলা ফর্দোর ‘অপ্রতিরোধ্য সুরক্ষা’-র ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তৃতীয় ও সবচেয়ে বিস্তৃত আঘাতটি এসেছে ইস্পাহানে। ইরানের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি মূলত একটি বৃহৎ গবেষণা কমপ্লেক্স। এনটিআই (Nuclear Threat Initiative)-এর তথ্যমতে, এটি চীনের সহায়তায় নির্মিত এবং ১৯৮৪ সাল থেকে চালু রয়েছে।

এখানে প্রায় তিন হাজার বিজ্ঞানী পারমাণবিক গবেষণায় নিয়োজিত। চীনের সরবরাহকৃত তিনটি ছোট গবেষণা চুল্লি, একটি ইউরেনিয়াম কনভার্সন ফ্যাসিলিটি, একটি জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র এবং জিরকোনিয়াম ক্ল্যাডিং কারখানাসহ বহু উচ্চ প্রযুক্তির স্থাপনা রয়েছে।

হামলায় ইস্পাহানের সামরিক ঘাঁটির একটি অংশ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার ভোররাতে চালানো এই হামলা ছিল এতটাই সুনির্দিষ্ট যে, কয়েক সেকেন্ডেই বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে গোটা এলাকা।

এই একযোগে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র আর ছায়াযুদ্ধের পন্থায় নেই। বরং সরাসরি সামরিক শক্তি প্রয়োগে প্রস্তুত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হামলা ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিরতি নিতে বাধ্য করতে পারে।

তবে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসবে কি না, তা নির্ভর করছে ইরানের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর। ইতোমধ্যেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এ নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন এবং বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের কাছে অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি চলছে।

এই হামলার পর তেহরানে আতঙ্কের ছায়া। মধ্যপ্রাচ্যের মাটিতে নতুন করে বড় ধরণের যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশ্লেষকরা। পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে গেলে ইরানকে ব্যাপক চাপের মুখে পড়তে হবে—এ কথা আজ পরিষ্কার।

তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: এই হামলা কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে অগ্রসর হওয়ার সূচনা?

বিশ্ব এখন নজর রাখছে ইরানের প্রতিক্রিয়ার দিকে। আর ট্রাম্পের এক পোস্ট ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি যেন আগ্নেয়গিরির মুখে দাঁড়িয়ে।

Tidak ada komentar yang ditemukan


News Card Generator