যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা: সীমান্তে আবারও সংঘর্ষের অভিযোগ
দীর্ঘদিন ধরে চলমান ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে গঠিত হয় যুদ্ধবিরতি চুক্তি। ৪৮ ঘণ্টার নিবিড় আলোচনা শেষে ঘোষণা আসে এই যুদ্ধবিরতির। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উভয় পক্ষই দ্রুত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। কিন্তু চুক্তির বাস্তবায়ন শুরুর পর খুব বেশি সময় পার হয়নি—ইতিমধ্যেই সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটেছে।
ভারতের অভিযোগ: চুক্তি ভেঙেছে পাকিস্তান
ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে এবং সীমান্তে আগ্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অস্ত্রবিরতির নিয়ম ভেঙে বেশ কয়েকবার গোলাবর্ষণ করেছে এবং ভারতীয় চৌকিগুলো লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ চালিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রত্যাখ্যান: উল্টো ভারতের বিরুদ্ধেই অভিযোগ
পাকিস্তান ভারতের অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” আখ্যা দিয়ে তা সোজাসাপ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি চুক্তি “পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তারা আরও জানায়, “পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দায়িত্বশীল ও সংযমীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে, এবং উস্কানিমূলক আচরণ থেকে বিরত রয়েছে।” কিন্তু একই সঙ্গে পাকিস্তানও ভারতকে অভিযুক্ত করে দাবি করেছে, ভারতের দিক থেকেই যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে।
দুই দেশের সংবাদমাধ্যমে পাল্টাপাল্টি তথ্য
আল জাজিরা ও দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল জানায়, পাকিস্তান এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি “বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ” এবং যেকোনও উত্তেজনা কূটনৈতিক পর্যায়ে সমাধানের পক্ষে তারা।
পাকিস্তান আরও বলেছে, সীমান্তে দায়িত্ব পালনরত সেনাদের উচিত “সাবধানতা ও সংযম” প্রদর্শন করা এবং দ্বিপাক্ষিক চ্যানেলের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগী হওয়া।
সংঘর্ষ ফের নতুন শঙ্কা সৃষ্টি করছে
যুদ্ধবিরতির পরপরই সীমান্তে ফের সংঘর্ষের ঘটনায় এই অঞ্চলকে ঘিরে আবারও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, হয়তো এই চুক্তি স্থায়ী শান্তি বয়ে আনতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তান কয়েক দশক ধরেই কাশ্মীর ইস্যুতে বিরোধে লিপ্ত। দু’দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ ও সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছে। প্রতিবারই আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনা কমলেও স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
বিশ্লেষকদের মন্তব্য: “আস্থা তৈরি না হলে চুক্তি ভঙ্গ হবে বারবার”
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের যুদ্ধবিরতি চুক্তি তখনই কার্যকর হবে যখন উভয় পক্ষ একে অপরের প্রতি ন্যূনতম আস্থা রাখতে পারবে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সেই আস্থা গড়ে ওঠেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। সীমান্তে সেনাদের তৎপরতা, গোয়েন্দা নজরদারি ও রাজনৈতিক উত্তেজনা বরং যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
উপসংহার
যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যখন আশাবাদের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছিল, তখনই ভারত-পাকিস্তানের এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আবারও প্রমাণ করল, দুই দেশের সম্পর্ক এখনো অনাস্থা, সন্দেহ ও সংঘাতের আবর্তে আটকে আছে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও শান্তিপ্রয়াসী মহল আবারও উদ্বিগ্ন—এই যুদ্ধবিরতিও শেষ পর্যন্ত কি অতীতের মতো ভেঙে পড়বে?