close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

যুবদল-যুবলীগের মিলিত ঠিকাদারি সিন্ডিকেট! ১ কোটি টাকার কাজ নিয়ে দুর্নীতির পাহাড়, সাংবাদিককে হুমকির অডিও ভাইরাল..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
পটুয়াখালী বাউফলে ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার সরকারি প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঠিকাদারি ভাগাভাগি করে নিয়েছেন যুবদল ও যুবলীগ নেতারা। সাংবাদিক দুর্নীতির খবর নিতে গেলে হুমকি, গালিগালাজ—ভাইরাল..

পটুয়াখালীতে যুবদল-যুবলীগের মিলিত ঠিকাদারি সিন্ডিকেট: ১ কোটি টাকার কাজের পেছনে দুর্নীতির রাজত্ব, সাংবাদিককে হুমকির অডিও ভাইরাল

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সরকারি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে কোটি টাকার ঠিকাদারি ঘিরে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন যুবদল ও যুবলীগের দুই প্রভাবশালী নেতা—যুবদলের পটুয়াখালী জেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহাগ এবং যুবলীগ নেতা মনিবুর রহমান। সরকারি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ভয়াবহ অনিয়ম, মানহীন কাজ এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। এই প্রকল্পে গড়িমসি, কাজের মান খারাপ করা এবং সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনাও সামনে এসেছে।

দুর্নীতির খতিয়ান: সংখ্যায় ও বাস্তবে ভয়ংকর

বাউফল পৌর শহরের পশ্চিম নূরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মাটির নিচে ৭৯৯টি পাইল বসানো, বেইজ ঢালাই ও ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৬০০টির মতো পাইল বসিয়েই বেইজ ঢালাই করা হচ্ছে। যেখানে বেইজের নিচে ৭৫ সেন্টিমিটার সিসি ঢালাই দেওয়ার কথা, সেখানে দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার।

এছাড়াও বালু-সিমেন্ট মিশ্রণে কারচুপি, কাঠ ও বাঁশ ব্যবহার করে সেন্টারিং করার মতো ভয়াবহ অনিয়ম ধরা পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ মানহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সাংবাদিকদের হুমকি: ভাইরাল অডিও ফাঁস করল মূল চরিত্র

এই দুর্নীতির খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হতে হয়েছে হুমকির। বাউফলের রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দেশ রূপান্তরের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমানসহ একাধিক সাংবাদিক যখন ঘটনাস্থলে যান, ঠিকাদার সোহাগ তাদের মোবাইলে কল দিয়ে গালাগাল করেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

এই ফোনালাপের অডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। অডিওতে স্পষ্টভাবে শোনা যায়, সোহাগ বলছেন—“১৭ বছর পর একটা কাজ পাইছি, এখন সাংবাদিকরা বাধা দেবে?” এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় সোহাগের এই দুঃসাহস।

ঠিকাদারের দাবি: কাজ আমি পেয়েছি, কিন্তু এখন করছে সোহাগ

নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পের ঠিকাদার ছিলেন সবুজবাগের মনিবুর রহমান, যিনি যুবলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা। এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী আলী ইবনে আব্বাস বলেন, সোহাগ এই প্রকল্পের ঠিকাদার নন। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনিবুর কাজ পাওয়ার পর সুবিধার জন্য ৫ আগস্ট থেকে দায়িত্ব দিয়ে দেন সোহাগকে।

মনিবুর নিজেই বলেন, “শুরু থেকে আমি করছিলাম, পরে সোহাগকে দায়িত্ব দিয়েছি। ও বুঝে উঠতে না পারায় কাজের কিছু ভুল হতে পারে।”

রাজনৈতিক প্রভাব: ফ্যাসিস্ট যুগের ঠিকাদারি গেম

জানা যায়, মনিবুর রহমান ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং বর্তমানে যুবলীগের জেলা কমিটির সদস্য। তার সঙ্গে সোহাগের পারস্পরিক ঠিকাদারি চুক্তি কার্যত রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে করা এক ধরনের সুবিধাভোগের নমুনা বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের ‘পট পরিবর্তনের’ পর এই দুই নেতা যৌথভাবে কাজ ভাগাভাগি করে নেন। প্রকৃতপক্ষে কাজটি মনিবুরের হলেও বাস্তবায়ন করছে সোহাগ।

যুবদলের প্রতিক্রিয়া: কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য, তদন্তে ব্যবস্থা

এই বিষয়ে যুবদল জেলা শাখার সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আওয়ামী লীগের কারও সঙ্গে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা যাবে না। এ ঘটনায় হুমায়ুন কবির সোহাগকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”


রাজনীতি ও ঠিকাদারির অপবিত্র জোট

এই ঘটনায় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, রাজনৈতিক পরিচয়ের বলয় ব্যবহার করে স্থানীয় উন্নয়ন কাজকে লুটপাটের মঞ্চ বানানো হয়েছে। যুবদল-যুবলীগের নেতাদের গোপন জোট, প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম এবং সাংবাদিকদের হুমকি—সব মিলিয়ে গণতন্ত্র ও সুশাসনের মুখে একটি ভয়াবহ চপেটাঘাত। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় কি না।

Geen reacties gevonden


News Card Generator