আগামী শনিবার সারা দেশে উদযাপন হবে ঈদুল আজহা। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ঈদুল আজহা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব না; এটি ত্যাগ, ভালোবাসা ও একতার বার্তা দেয় মানুষকে। মুসলমানদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ত্যাগের বিষয়টির শিক্ষা দেয়।ঈদুল আজহার প্রেক্ষাপট জড়িয়ে আছে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও তার ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর সীমাহীন আনুগত্য, ত্যাগ ও আত্মসমর্পণের ইতিহাসের সাথে। মহান আল্লাহতায়ালার আদেশে প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করার প্রবল ইচ্ছা, আর তাতে পুত্রের সম্মতি সহকারে আত্মোৎসর্গের মানসিকতা ইসলামী ইতিহাসে ত্যাগ ও বিশ্বাসের চূড়ান্ত নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত। এই অনন্য ত্যাগের স্মারক হিসেবেই আজও ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন।
ঈদুল আজহার শিক্ষা হলো-আত্মার পশুত্ব, অহংকার, হিংসা, লোভ এবং অমানবিক প্রবৃত্তি নির্মূল করা। সবকিছু ভাগ করে নেয়া। কোরবানির মাংস পরিবার, প্রতিবেশী ও গরিব মানুষের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এটি সমাজে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমায়। যারা সুবিধাবঞ্চিত, তাদের প্রতি দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়।ঈদুল আজহা আমাদের একতার গুরুত্ব শেখায়। এই দিনে পরিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সময় কাটায় মানুষ। একসঙ্গে খাওয়া, হাসি-আনন্দ ভাগ করে নেয়া ঈদ উৎসবের আনন্দ বাড়ায়। সমাজে যারা অভাবে কিংবা একা আছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় ঈদুল আজহা। এসব মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই ঈদের আনন্দ পূর্ণ হয়।
ত্যাগের মনোভাব নিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হোক লক্ষ্য। ঈদুল আজহার শিক্ষা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে প্রেরণা জোগাক। এই উৎসব আমাদের হৃদয়ে নতুন আশা ও সম্ভাবনা জাগ্রত করুক। নিয়ে আসুক শান্তি, সমৃদ্ধি ও একতা। ঈদ মোবারক।যশোরে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। এখানে পরপর দু’টি জামাত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল সাড়ে সাতটায়। আর দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে আটটায়। এছাড়া, মডেল মসজিদে প্রথম জামাত সাতটায়, দ্বিতীয় জামাত আটটায়, কারবালা জামে মসজিদে প্রথম জামাত সাতটায় ও দ্বিতীয় জামাত আটটায় অনুষ্ঠিত হবে। এ বছর সরকারি কর্মচারীরা বিভিন্ন ছুটি মিলিয়ে একসাথে ১০ দিনের ছুটি কাটাবেন ঈদের আগে-পরে। আর সংবাদপত্রে ছুটি শুরু হচ্ছে ঈদের দু’দিন আগে থেকে। যা অন্যান্য বছর ঈদের একদিন আগে শুরু হয়।
সকালে কোনোকিছু না খেয়ে ঈদগাহে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঈদুল আজহা উদযাপন। মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহের আশায় ঈদের নামাজ শেষে সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কোরবানি দেবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। মূলত মনের পশুত্বকে জবাই করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া-ই এদিনের উদ্দেশ্য। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত গোটা দেশ।
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ ছুটছে নাড়িপোতা গ্রামের দিকে। তবে,তীব্র গরম বাধ সাধছে ঈদ যাত্রায়।
প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি দিতে নিয়ে যান আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তবে, আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। এটির মধ্য দিয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা অনুসরণেই সারা বিশ্বে মুসলিম সম্প্রদায় হিজরিবর্ষের ১০ জিলহজ আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে পশু কোরবানি করে থাকে।শনিবার ঈদ উদযাপন হলেও পরের দু’দিনও পশু কোরবানির বিধান রয়েছে। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী, জবাই করা পশুর মাংসের একটি অংশ বিলি করা হয় দুস্থ ও দরিদ্রদের মধ্যে। এছাড়া, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থও গরিবের মধ্যে বিতরণ করা হয়।এ দিনটিতে মুসলমানেরা ফজরের নামাজের পর ঈদগাহে গিয়ে দু’রাকাত ঈদুল আজহার ওয়াজিব নামাজ আদায় করার পর নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ও উট আল্লাহর নামে কোরবানি করে।ইসলামী চান্দ্র পঞ্জিকায় ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হয় ১০ জিলহজ। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে।ঈদুল আজহার আমলকোরবানি করা ঈদুল আজহার প্রধান আমল। কোরবানি ইসলামের অন্যতম নিদর্শন। শরিয়তে কোরবানির যে পন্থা ও পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে, তার মূলসূত্র ‘মিল্লাতে ইবরাহিমি’তে বিদ্যমান ছিল। কোরআন মজিদ ও হাদিস থেকে তা স্পষ্ট জানা যায়। এজন্য কোরবানিকে ‘সুন্নাতে ইবরাহিমি’ও বলা হয়।ঈদ মুসলিম মিল্লাতের সবচেয়ে বড় আনন্দের দিন। মনের সব কালিমা দূর করে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, মান-অভিমান বিসর্জন দিয়ে একতা, সমদর্শিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের দিন এটি। যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজের পবিত্রতা ঘোষণা করার পবিত্র উপলক্ষ।ঈদুল আজহার দিন মহানবী (সা.) বিভিন্ন আমল করতেন। সেগুলো অনুসরণ করা আমাদের জন্য সুন্নাত। পাশাপাশি এসব আমল প্রত্যাশিত আনন্দঘন ঈদকে প্রাণময় করে তোলে। এসব আমলের মধ্যে রয়েছে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা, মিসওয়াক করা এবং সুন্দর ও উত্তম পোশাক পরিধান করা। ঈদগাহে যাওয়ার আগে পানাহার না করা। ঈদুল আজহার দিন পানাহার ব্যতীত ঈদগাহে গমন করা ও নামাজের পর নিজের কোরবানির মাংস দিয়ে প্রথম খাবার গ্রহণ করা সুন্নত। ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির বলা। তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহতাআলাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নাত। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, মেয়েরা নীরবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করতে হবে। কোনো ধরনের অপারগতা না থাকলে, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা সুন্নত। ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করা। ঈদগাহে যাওয়ার সময় এক রাস্তা দিয়ে গমন করা, নামাজ শেষে অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা সুন্নাত। ঈদগাহে যাওয়ার সময় শিশুদের সঙ্গে নেওয়া। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করাও সুন্নাতের অংশ। শুভেচ্ছা বিনিময় করার সময় ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিন কুম’ বলা সুন্নাত। ঈদের খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা সুন্নাত এবং ঈদের নামাজের পর কোরবানি করা।উল্লেখ্য, ঈদের নামাজের আগে-পরে ওই স্থানে যেকোনো ধরনের নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ। তবে, ঈদের নামাজের পর ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে দু’রাকাত নফল আদায় করা সুন্নাত।
کوئی تبصرہ نہیں ملا